আমরা এবং পরিবেশ: কে কার পরিবর্তন করে? পর্ব: ২

0
442

পর্ব: ১ | পর্ব:২

লেখক: ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী | অনুবাদক: রাশেদুল আলম

হে ভাই! সমস্যা হল, প্রতিটি যিনাকারিণী নারীই কামনা করে যে, পৃথিবীর সকল নারী যেনাে যিনাকারিণী হয়ে যায়। আমার সাথে যােগাযােগ করে অনেকেই হেদায়াতের দোয়া চায় এবং হেদায়েতের পথে চলার আশা ব্যক্ত করে। আমি তাদের বলি, তােমার এই আশা এবং আহলে কিতাবদের আশায় কোনােই কাজ নেই। যে খারাপ কাজ করে সে সেটাকে বৈধ মনে করে এবং সেটা চালিয়ে যায়। কোনাে জিনিস শুধু মাত্র আশা-আকাক্ষা দিয়ে অর্জন করা যায় না। কবির ভাষায়, ‘আশা-আকাঙ্ক্ষা দিয়ে উদ্দেশ্য অর্জন করা যায় না; বরং দুনিয়াকে গ্রহণ করতে হলে তাকে পরাজিত করতে হবে।’

মানুষ যখন সত্যি সত্যিই হেদায়াত কামনা করবে, অবশ্যই তাকে এর জন্যে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে মানুষ কমলার চারা লাগাবে সে সেখান থেকে কমলাই পাবে,এখানে কলা বা আঙ্গুরের আশা করাটা হবেচ নিতান্তই বােকামি। অনুরূপভাবে যে খারাপ লােকদের সাথে চলাফেরা করে, নিজের জীবনের মূল্যবান সময়গুলাে নষ্ট করবে অতঃপর তার সাথীদের দিকে তাকিয়ে বলবে আল্লাহ! সে কত বড় হয়েছে, সে মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেছে, আমার এই সাথী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে, অপরজন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে! আর আমি এই অবস্থায় পড়ে আছি। আমরা বলি, তােমার অবস্থা তাে এমনই হবে। তুমি খারাপ লােকদের সাথে চলে জীবনের মূল্যবান সময় টুকু নষ্ট করেছাে। তাহলে তােমার অবস্থা এমন হবে না তাে কেমন হবে?

আমি অনেকগুলাে জেল পরিদর্শন করেছি এবং সেখানে অনেক ধূমপানকারী ও নেশাগ্রস্তদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, কথা বলেছি এবং তাদের সামনে বক্তব্য দিয়েছি। এমনকি অনেক ফাঁসির আসামীদের সাথেও আমার সাক্ষাৎ হয়েছে, তাদের সাথে আমার কথা হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি যে, তাদের এই পরিবর্তন পরিবেশের কারণেই হয়েছে; খুনি বা নেশাগ্রস্ত হয়েছে। কোনাে খুনিই। জন্মের সময় মায়ের পেট থেকে অস্ত্র নিয়ে আসেনি। অথবা পৃথিবীতে এসেই সে অস্ত্র দেখেনি যে, সে জন্মের পর থেকেই খুনি হয়ে জন্মাবে। অনুরূপভাবে কোনাে ধূমপানকারীও জন্মের সময় তার মায়ের পেট থেকে গাজা, হিরইন ও ইয়াবা নিয়ে আসেনি; বরং অন্য আর দশটা সন্তানের মত তাদেরও নিস্পাপ অবস্থায় জন্ম হয়েছে; কিন্তু পরিবেশ তার মধ্যে বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সে যখন খারাপ পরিবেশে থেকেছে, খারাপ লােকদের সাথে মিশেছে তখন সে খারাপের দিকে পরিবর্তিত হয়েছে।

হাসান বসরি রহিমাহুল্লাহ যখন জাহান্নামিদের অবস্থা সম্পর্কিত এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন: আমাদের কোনাে সুপরিশকারী নেই এবং কোনাে অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই। হায়, যদি কোনরূপে আমরা পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের সুযােগ পেতাম! তাহলে আমরা মুমিন হয়ে যেতাম। নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন এবং তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। আপনার পালনকর্তা প্রবল প্ররাক্রমশালী ও পরম দয়ালু।‘ [সুরা আশ-শুআরা, আয়াত : ১০০-১০৩ ]

হাসান বসরি রহ. যখন এই আয়াত তেলাওয়াত করেন তখন তিনি বলেন তােমরা দুনিয়াতে বেশি বেশি নেক লােকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করাে। তােমরা যদি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে না পারাে বা না চাও তাহলে অন্ততপক্ষে তােমরা তাদের সাথে পরিচিত হও। যেমন তুমি কোনাে মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে বন্ধুত্ব করবে না, হাফেযে কুরআনের সাথে বন্ধুত্ব করবে না, তালেবে ইলমের সাথে বন্ধুত্ব করবে না তাহলে কমপক্ষে যেনাে এমন হয় যে, তুমি তাদের সাথে পরিচিত হবে, তােমাকে দেখলে সে যেনাে চিনতে পারে এবং তুমিও তাকে চিনতে পার, সে তােমার নাম জানে এবং তুমিও তার নাম জান। এটা শর্ত নয় যে, তাঁর সাথে প্রতিদিন আমার দেখা-সাক্ষাৎ হতে হবে বরং তার সাথে দুই সপ্তাহে একবার দেখা করবে। তাও না পারলে সে যেনাে আমাকে চিনে, আমার নাম জানে, আমি যখন তার কাছে যাই সে যেনাে আমার নাম নিয়ে বলতে পারে হে অমুক! কেমন আছাে? অভিনন্দন তােমাকে।

হাসান বসরি রহিমাহুল্লাহ বলেন, তােমরা দুনিয়াতে সৎ ও নেককার লােকদের সাথে বেশি বেশি বন্ধুত্ব করাে,কারণ কিয়ামতের দিন সৎ ও নেককার বন্ধু তােমার উপকারে আসবে। লােকেরা তাকে প্রশ্ন করল, কীভাবে? তিনি বলেন, জাহান্নামিদের জন্যে নবি-রাসুলগণ, শহিদগণ এবং ফেরেস্তাগণ শাফায়াত করবেন। আর জান্নাতিরা তাদের নিয়ে আলােচনা করবে। যেমন এক জান্নাতি বলবে, আমার অমুক বন্ধুর কী হয়েছে? জান্নাতি বন্ধু যখন দুনিয়াতে থাকা তার বন্ধুকে জান্নাতে দেখতে না পাবে। অথচ সে কাফেরও ছিলাে না, সে মুমিন ছিলাে কিন্তু কখনাে কখনাে গুনাহে লিপ্ত হত। সে বলবে, আমার অমুক বন্ধুর কী হয়েছে? সে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, অতঃপর যখন বলা হবে যে, তাকে তাে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে, তখন মুমিন বন্ধু বলবে, হে আমার রব!অমুক বন্ধুকে ছাড়া জান্নাতে আমার স্বাদ পূর্ণ হবে না।

তখন আল্লাহ তাআলা আদেশ দিবেন আর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করানাে হবে। তখন জাহান্নামিরা একে অপরকে জিজ্ঞেস করবে, তার জন্যে কে শাফায়াত করল? কোনাে নবি কি তার জন্যে শাফায়াত করেছে? বলা হবে, না; কোনাে শহিদ? বলা হবে, না; তাহলে সে কি তার নেক আমলের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে? বলা হবে, না; তাহলে কে তার জন্যে শাফায়াত করল? তখন বলা হবে, তার অমুক বন্ধু তার জন্যে শাফায়াত করেছে। আর তখন জাহান্নামিরা বলবে : আমাদের কোনাে সুপরিশকারী নেই এবং কোনাে অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই। হায়, যদি কোনরূপে আমরা পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের সুযােগ পেতাম! তবে আমরা মুমিন হয়ে যেতাম।[সুরা শুআরা: ১০০-১০২]

অর্থাৎ হায় আমরা যদি দুনিয়াতে নেক ও সৎ বান্দাদের সাথে সম্পর্ক রাখতাম তাহলে আমরাও উত্তম লােকদের অন্তর্ভূক্ত হতাম এবং তাদের সাথে জান্নাতেও থাকতে পারতাম।‘ [সুরা আশ-শুআরা, আয়াত : ১০০-১০৩]

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে নেককার লােকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করার তাওফিক দান করুন এবং আমরা এতক্ষণ যা কিছু আলােচনা করলাম তার উপর আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!!

পর্ব: ১ | পর্ব:২

উৎস: আত্মবিশ্বাসপৃষ্ঠা: ২৪৪ – ২৪৭


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন