রাত পোহালেই খুশির ঈদ। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আগামীকাল মুসলিমগণ পুরস্কার গ্রহণ করবে। সকল মুসলিম বিপুল উৎসাহের সাথে এই ঈদ উদযাপন করবে; কিন্তু আমরা ক’জন মুসলিম ঈদের প্রকৃত অর্থের দিকে লক্ষ করি? কীভাবে আমাদের ঈদ সত্যিকারের ঈদ হয়ে উঠতে পারে—সেটাই বা কজন জানি?
ঈদ কেবল গান-বাদ্য শ্রবণ কিংবা অর্থহীন আনন্দের নাম নয়; বরং ঈদ মানে করুণাময় মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। তার অনুগ্রহ স্বীকার করা এবং তার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেওয়া।
ঈদ মানে আল্লাহর নিয়ামতের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো। ঈদ মানে শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ঐক্য শক্তি প্রদর্শন করা।
ঈদের দিনের কয়েকটি আমল
এক. ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা সালাতে যাওয়ার পূর্বে খেজুর বা মিষ্টি-জাতীয় কিছু খাওয়া।
দুই. সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা। এর মাধ্যমে সিয়াম পালনকারী অশ্লীল এবং অনর্থক কাজ-কর্ম থেকে পবিত্র হয়। গরিব-দুঃখীদের ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পায়। ধনীদের অন্তর থেকে কার্পণ্য দূর হয় এবং মুসলিমদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহাদ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিন. সাধ্যমতো বৈধ সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা। নতুন এবং সুন্দর পোশাক পরিধান করা। সুগন্ধি ব্যবহার করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। তাছাড়া এর মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
রাসূল (ﷺ) বলেন – ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে নিয়ামত দান করেন তখন তিনি চান বান্দা যেন তার নেয়ামতের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।‘ [জামি তিরমিযী : ২৮১৯]
চার. পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা। সালাম-মুসাফাহা। বিনিময় করা। মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-সৃজনের প্রতি সদাচার করা। পরিচিতদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করা।
বস্তুত ঈদে মুসলিমদের মাঝে সম্প্রীতি ও ভালোবাসার আশ্চর্য প্রকাশ ঘটে। শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকেই অনাবিল আনন্দের চিত্র ফুঠে ওঠে। এজন্যই তারা হাসি-ঠাট্টা, নির্দোষ রসিকতা, সরস কৌতুক এবং আনন্দ-বিনােদনের মাধ্যমে ঈদ উদযাপন করে।
ঈদের দিন রাজা-প্রজা, ধনী-গরীব, ছােট-বড়, সুখী-দুঃখী সবার একই কাতারে দাঁড়ানো আমাদের কিয়ামত দিবসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ঈদের দিন হলাে পুরস্কার প্রদানের দিন। যে-ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় সিয়াম রাখবে সে বিরাট পুরস্কার লাভ করবে। বিপুল সওয়াবের অধিকারী হবে। আর যে সিয়ামে শিথিলতা করবে, আল্লাহর আদেশ অমান্য করবে, পাপাচারে লিপ্ত হবে সে ‘হায় আফসােস করবে এবং অনুশােচনার আগুনে দগ্ধ হবে।
ঈদগাহ থেকে মানুষ দুই দলে বিভক্ত হয়ে ফেরে। এক দল পুরস্কার নিয়ে ফিরে। আল্লাহ তাদের বলেন, তােমরা ফিরে যাও। তােমাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তােমরা আমাকে সন্তুষ্ট করেছ। আমি তােমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি। আরেকদল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা শুধু হতাশা ও আফসােস নিয়ে ফেরে।
এক বুযুর্গ ঈদের দিন একদল লােকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তারা ঈদের আনন্দে মত্ত হয়ে খেল-তামাশায় লিপ্ত ছিল। বুযুর্গ তাদের দেখে বলেন—তােমরা যদি ভালাে আমল করে রামাদান অতিবাহিত করে থাকো তাহলে তাে এটা ভালাে আমল করতে পারার শােকর নয়। আর যদি খারাপ আমল করে কাটিয়ে থাকো তাহলে রহমানের সাথে মন্দ আচরণ করার পর তাে কেউ এমন উল্লাস করতে পারে না।
উমার ইবনু আবদিল আযীয রাহিমাহুল্লাহু একবার দেখেন, লােকেরা সূর্যাস্তের সময় উট-ঘােড়ায় চড়ে দ্রুত আরাফাহ থেকে ফিরে যাচ্ছে। তখন তিনি বলেন, আজ সে অগ্রগামী নয়, যার উট বা ঘােড়া আগে আগে চলছে। আজ তাে সে অগ্রগামী যার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রিয় মুসলিম ভাই, একটু চিন্তা করুন, বিগত ঈদগুলােতে আপনার সাথে আপনার বাবা, দাদা, বন্ধু-বান্ধবসহ কত প্রিয়জন সালাত আদায় করেছে; কিন্তু আজ তারা কোথায়?
হে ভাই, আগামীকাল পুরস্কার গ্রহণের দিন। দুহাত ভরে রবের ভাণ্ডার থেকে চেয়ে নেওয়ার দিন।
সুতরাং, আপনি চেষ্টা করুন, আপনার আমলনামায় যেন ভালাে কিছু লেখা হয়। আর অপেক্ষা করতে থাকুন সবচেয়ে বড় ঈদের দিনের জন্য। যে-দিন আপনি আপনার রবের সন্তুষ্টি ও ক্ষমা পেয়ে সফলতার শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছে যাবেন, ইন শা আল্লাহ। যে-দিন আপনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
মহান আল্লাহ বলেন – ‘আর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম হবে। আর এই পার্থিবজীবন তাে প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়।‘ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫]
হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদের কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা। সর্বজ্ঞানী। আপনি আমাদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি তাওবা কবুলকারী, চিরদয়াময়।
উৎসঃ ভালোবাসার রামাদান, পৃষ্ঠা: ১৭৭ – ১৭৯
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]