লেখকঃ শেইখ সলীহ্ ইবন্ ফাওযান আল–ফাওযান | অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ আবদ্ আল-আহাদ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্
অর্থাৎ, আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। এই কথা যদি কেউ সত্যতার সাথে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উচ্চারন করে, এ কথার অর্থ যা বলে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে, বিশ্বাস এবং চালচলনে এই কথাকে বাস্তবিক রূপদান করে তাহলে ব্যক্তি ও সমাজ উভয় জীবনেই একথার প্রভাব আসলেই চমৎকার এবং প্রশংসনীয়।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর তিনটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতাঃ
[১] গোটা মুসলিম উম্মাহ্কে একত্রীকরণঃ
একথা গোটা মুসলিম উম্মাহ্কে ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান করবে। ফলে তারা বাতিল শক্তি তথা তাদের শত্রুদের বিপক্ষে সংগ্রামে বিজয়ী হবে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা সকলেই আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন কর্তৃক মনোনীত একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামকে অনুসরণ করব, মেনে চলব। যখন আমাদের আকীদাহ্ তথা ধর্মীয় বিশ্বাস হবে এক ও অভিন্ন। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “আর তোমরা একযোগে আল্লাহ্র রজ্জুকে সুদৃঢ়রূপে ধারন কর ও বিভক্ত হয়ে যেয়ো না।” [সূরা আল ইমরান; ৩:১০৩]
“আর তারা যদি তোমাকে প্রতারিত করার ইচ্ছা করে তবে তোমার জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনিই তোমাকে স্বীয় সাহায্য দ্বারা এবং মু’মিনগণ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। আর তিনি মু’মিনদের অন্তরে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করেছেন, তুমি যদি পৃথিবীর সমুদয় সম্পদও ব্যয় করতে তবুও তাদের অন্তরে প্রীতি, সদ্ভাব ও ঐক্য স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ্ই ওদের পরস্পরের মধ্যে প্রীতি ও সদ্ভাব স্থাপন করে দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তিনি মহাশক্তিমান, মহাকৌশলী।” [সূরা আনফাল; ৮:৬২-৬৩]
আকীদাহ্ তথা বিশ্বাসগত পার্থক্যের কারনেই মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে আজ এতো বিভেদ, অনৈক্য, বিভ্রান্তি আর বিশৃঙ্খলা। একমাত্র এই কারনেই মুসলিম উম্মাহ্র ভিতর আজ এতো দ্বন্দ্ব আর হানাহানির সৃষ্টি হয়েছে। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
“নিশ্চয় যারা নিজেদের দ্বীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহ্র হাওলায় রয়েছে, পরিশেষে তিনি তাদেরকে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবিহিত করবেন।” [সূরা আন’আম; ৬:১৫৯]
“কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে; প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়েই আনন্দিত।” [সূরা মু’মিনূন; ২৩:৫৩]
আর তাই মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃতঅর্থে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেনা যতক্ষণ না তারা ঈমান এবং আকীদাহ্ সম্পর্কে যথার্থ এবং বিশুদ্ধ উপলব্ধি অর্জন করতে পেরেছে। এখানেই নিহিত “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর তাৎপর্য। একথার তাৎপর্য উপলব্ধি না করে কারোর পক্ষে ঈমান ও আকীদাহ্গত পরিশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে এবং পরে আরবের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর কী ক্ষমতা।
[২] শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন:
যে সমাজ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং এর শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেয় সেই সমাজে বিরাজ করে শুধুই শান্তি ও নিরাপত্তা। এমন সমাজের প্রতিটি মানুষই কেবলমাত্র সেই কাজের ব্যপারে যত্নশীল হবে যা আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন তাদের জন্য হালাল বা বৈধ ঘোষণা করেছেন। পক্ষান্তরে, তারা সেই সমস্ত কাজ পরিহার করে চলবে যা তিনি হারাম বা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সমাজের প্রতিটি মানুষই তখন তাদের এক ও অভিন্ন আকীদাহ্ তথা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অনুসরণ করে সকল কাজ-কর্ম সম্পাদন করবে। কারণ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর দাবী হল, যে কেউ এই কথার মৌখিক স্বীকৃতি দেবে তাকে এর সত্যতা বাস্তবায়ন করতে হবে কর্মের মাধ্যমে। কর্মহীন মৌখিক ঐ স্বীকৃতি একটি অন্তঃসার শূন্য স্লোগান ছাড়া কিছুই নয়। কাজেই কালিমার শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং সেই শিক্ষাকে মেনে চলে এমন সমাজের লোকদেরকে দ্বারা কখনও জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়, পারস্পারিক হানাহানি ইত্যাদি সংঘটিত হতে পারেনা। এমন সমাজের লোকেরা গভীর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সৎকর্ম সম্পাদনের জন্যে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এবং ভালবাসবে। আর তাদের এই পারস্পারিক সহযোগিতা ও ভালবাসা হবে কেবলমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্যে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই।” [সূরা হুজুরাত; ৪৯:১০]
বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত সে সব আরবদের জীবনে যারা একসময় ইসলাম মেনে চলত না। অথচ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর পরশে তাদের জীবনে এসেছিল আমূল পরিবর্তন। ইসলাম পূর্ব সময়ে তাদের জীবন ছিল পারস্পারিক মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, খুনাখুনি, লুটতরাজ ইত্যাদিতে জর্জরিত। সেই মানুষগুলোই যখন গ্রহণ করল তখন সব কিছু বদলে গেল। যারা রক্তের বদলে রক্ত চাইত তারা ইসলামের কারনেই শান্তি সৌহার্দ আর সম্প্রীতির এক অমায়িক বন্ধনে আবদ্ধ হল। যারা ছিল চরম শত্রু তারাই হল পরম বন্ধু। এই হল ইসলাম তথা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর ক্ষমতা। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্র রাসূল; আর যারা এর সাথে আছে তারা কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরে সহানুভূতিশীল।” [সূরা ফাত্হ; ৮৪:২৯]
“এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র যে নেয়ামত রয়েছে তা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, তৎপরে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে।” [সূরা আল-ইমরান; ৩:১০৩]
[৩] সুমহান লক্ষ্য অর্জন:
প্রকৃত সুখ-শান্তি অর্জন, পৃথিবীতে খেলাফাত (ইসলামিক কর্তৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা) প্রতিষ্ঠা, ইসলামের বিশুদ্ধ চর্চা এবং সমস্ত রকম বাতিল ও শয়তানি অপশক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে ধৈর্য এবং নিষ্ঠার সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া- এসবের একটিও সম্ভব নয় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর বাস্তবিক প্রয়োগ ছাড়া। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে খেলাফাত (প্রতিনিধিত্ব) অবশ্যই দান করবেন, যেমন তিনি (প্রতিনিধিত্ব) দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন; তারা শুধু আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবেনা, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী (ফাসিক) ।” [সূরা নূর; ২৪:৫৫]
কাজেই আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন উল্লেখিত সুমহান লক্ষ্যসমূহের অর্জনকে আমাদের জন্য শর্তসাপেক্ষ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, আমরা এগুলো কেবল মাত্র তখনই অর্জন করতে সমর্থ হব যখন আমরা শুধু মাত্র এবং কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত এবং আনুগত্য করব, তাঁর দেয়া বিধানকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে চলব এবং তাঁর সাথে কোন শরীক স্থাপন করব না। আর এটাই হল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর নিহিত মর্মার্থ।
আল-ইস্তিক্কামাহ্, ইস্যু নং-১
পাদটীকাঃ
[১] লা ইলাহা ইল্লালাহ্, মা’নাহা, মাকানাতুহা ওয়া ফাদ্লুহা (পৃষ্ঠা নং:৩৬-৩৯) হতে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
Alhamdulillah
ALLAH give us power to stay together…ameen
Subhanallah.
thanks for all writter and reader
JajakAllah……..for sharing this Article, every single words is true.
link apa tu QuranerAlo.com
klo klik link itu kena pulsa ga QuranerAlo.com
Semua cobaan yang terjadi, terjadi atas kehendak Tuhan. Dan setiap kehendak Tuhan adalah untuk memuliakan.
ইসলামের আলও
সুবহানআল্লাহ
Subhanallah
Subhanallah
subhan allah
subhanallah
add me
Ameen
Subhanallah
Ami kokhono apnader linke dhukte parina keno?
http://www.quraneralo.org/power-of-kalema-tayyeba/
Allah hu akbar.
Zajakallahu khairon. Amader jonno ai vabe link dile amra dekhte parbo. Dhonnobad
Subahunallah
Subhanallah
Subhanallah
বিচারের মাঠে মিজান -এ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এই শব্দটির ওজন সবচেয়ে ভারী হবে – এই বিষয়ে একটি সহীহ হাদীস আছে , সেটি এখানে সংযোজন করার অনুরোধ করছি।