মূলঃ ডঃ আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মাদ আল কাসেম | অনুবাদঃ মুহাঃ আবদুল্লাহ্ আল কাফী
প্রিয় বন্ধু, মানুষ জীবনে সফল হওয়ার জন্য কতই না পথ অবলম্বন করে? কিন্তু আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পদ্ধতি ব্যতিরেকে মুসলিম জীবনের প্রকৃত সফলতা অর্জন করা কি আদৌ সম্ভব? না। আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত মানচিত্র অনুসরণ করা ব্যতিরেকে সেই সাফল্যের স্বর্ণ দুয়ারে পৌঁছা আদৌ সম্ভব নয়। তাই আসুন, আল্লাহর নির্ধারিত সাফল্যের পথের পরিচয় নেয়ার চেষ্টা করি মসজিদে নববীর সম্মানিত ইমাম ও খতীব ডঃ আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মাদ আল কাসেম এর কলাম থেকে—
সৌভাগ্যের পথ:
মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদতের মাঝেই রয়েছে বান্দার প্রকৃত সাফল্য ও সৌভাগ্য। ইবাদত তখনই প্রকৃত ও সঠিক হবে, যখন বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তথা এখলাসের সাথে এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশিত পথে তা সম্পাদন করবে। কেননা বান্দার ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে না হলে তা বিনষ্ট। আল্লাহ্ বলেন: “আমি (কিয়ামত দিবসে) তাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলি-কণায় পরিণত করবো।” [সূরা ফুরকান: ২৩]
অনুরূপভাবে ইবাদতটি যদি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশনা তথা সুন্নত মোতাবেক না হয়, তবুও তা প্রত্যাখ্যাত। তিনি এরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে, যার পক্ষে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” [মুসলিম]
একনিষ্ঠ ভাবে সুন্নত মোতাবেক আমল হলেই তা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের মেহমানদারীর জন্যে নির্দিষ্ট আছে জান্নাতুল ফেরদাউস।” [সূরা কাহাফঃ ১০৭]
তাওহীদের দু’টি রুকনঃ
ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘না’ বাচক এবং ‘হ্যাঁ’ বাচক বাক্যের মাধ্যমে। (উহা হচ্ছে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) এ দু’টি ব্যতীত মানুষের ইসলাম বিশুদ্ধ হবে না। ‘না’ বাচক হচ্ছে: (লা- ইলাহা) অর্থাৎ যাবতীয় ইলাহ বা মা’বূদ এবং তাদের অনুসারীদের থেকে নিজেকে মুক্ত করা। আর ‘হ্যাঁ’ বাচক কথা হচ্ছে (ইল্লাল্লাহ্) অর্থাৎ এককভাবে আল্লাহকে ইলাহ বা মা’বূদ হিসেবে সাব্যস্তকরা এবং শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করা। আল্লাহ্ বলেন: “অতএব যারা গোমরাহ কারী ‘তাবুত’দেরকে মানবে না (অস্বীকার করবে) এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারা ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাঙ্গবার নয়।” [সূরা বাকারাঃ ২৫৬]
(‘সুদৃঢ় হাতল’ হচ্ছে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্)
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত যাবতীয় উপাস্যকে অস্বীকার করবে তার সম্পদ বিনষ্ট করা এবং রক্ত প্রবাহিত করা হারাম হয়ে যাবে। তার আভ্যন্তরিন বিষয় আল্লাহর কাছে ন্যস্ত।” [বুখারী ও মুসলিম]
ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাওহীদ এবং সর্বাধিক কঠিন নিষিদ্ধ বিষয় হচ্ছে শিরক। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করা হল, “সর্বাধিক বড় পাপ কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর শরীক নির্ধারণ করা অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” [বুখারী ও মুসলিম]
সকল নবী ও রাসূল মানুষকে তাওহীদের প্রতি আহ্বান করেছেন, এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং শিরক থেকে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ্ বলেন: “এবং প্রত্যেক জাতির নিকট আমি একজন করে রাসূল প্রেরণ করেছি এই নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাগূত থেকে দূরে থাক।” [সূরা নাহালঃ ৩৬]
তাওহীদের ফযীলতঃ
আল্লাহর নির্দেশ মত যে ব্যক্তি তাঁর ইবাদত করে চলবে, সে নিজের জীবনে, সম্পদে, সন্তান-সন্ততিতে, সমাজে ও দেশে নিরাপত্তা লাভ করবে। নিরাপত্তা লাভ করবে, কবরে, হাশরে এবং হিসাব-নিকাশের সময়। আল্লাহ্ বলেন: “যারা ঈমান এনেছে এবং ঈমানের সাথে যুলুমের মিশ্রণ ঘটায়নি (অর্থাৎ শির্ক করেনি), তাদের জন্যে রয়েছে নিরাপত্তা, আর তারাই সুপথ প্রাপ্ত।” [সূরা আনআমঃ ৮২]
নির্ভেজাল তাওহীদ পাপ সমূহ মিটিয়ে দেয় গুনাহ মোচন করে। জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] বলবে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন।” [বুখারী ও মুসলিম]
যে ব্যক্তি তাওহীদের ওয়াজিব ও মুস-াহাব দিকগুলোকে বাস-বায়ন করবে, সে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সকল লোকদের বিবরণ দিতে গিয়ে এরশাদ করেনঃ“ওরা এমন লোক যারা (শির্কী) ঝাড়-ফুঁক গ্রহণ করে না, লোহা পুড়িয়ে চিকিৎসা করে না, পাখি উড়িয়ে কুলক্ষণ-সুলক্ষণ নির্ধারণ করে না। তারা এককভাবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে।” [বুখারী ও মুসলিম]
শির্কের ভয়াবহতাঃ
শির্কের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। শির্ক করলে আমল বাতিল হয়ে যায়, আল্লাহ্ রাগান্বিত হন। আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি এই মর্মে ওহী করা হয়েছে যে, আপনি যদি শির্ক করেন তবে অবশ্যই আপনার আমল বাতিল হয়ে যাবে। আর অবশ্যই আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের দলভুক্ত হবেন।” [সূরা যুমারঃ ৬৫]
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক নির্ধারণ করে মৃত্যু বরণ করবে, সে নরকে প্রবেশ করবে।” [বুখারী]
শির্ক মানুষকে চিরকালের জন্যে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তার সাথে অংশী স্থাপন করাকে মার্জনা করেন না। অবশ্য তদাপেক্ষা ন্বি পর্যায়ের গুনাহ যাকে ইচ্ছা মার্জনা করে দেন।” [সূরা নিসাঃ ৪৮]
তাছাড়া শির্ক দুনিয়া ও আখেরাতের ধ্বংসকে অনিবার্য করে। ইবরাহীম খলীল (আঃ) শির্ক থেকে মুক্ত থাকার জন্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করেছেন। আল্লাহ্ তাঁর দু’আ উল্লেখ করে বলেনঃ “(হে আল্লাহ্!) আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখ।” [সূরা ইবরাহীমঃ ৩৫]
ইসলামের দাঈর সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় হচ্ছে তাওহীদ এবং ততসংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি আহবান জানানো। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আয বিন জাবাল (রাঃ)কে ইয়ামান প্রেরণ করার সময় বলেছিলেন, “তুমি এমন জাতির নিকট গমণ করছ যারা আহলে কিতাব। তাদেরকে সর্বপ্রথম যে কথার প্রতি আহবান জানাবে তা হচ্ছে, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল।” [বুখারী ও মুসলিম]
সবচেয়ে বড় যালেমঃ
যে গায়রুল্লাহর কাছে দু’আ করবে, সে নিজের উপর যুলুম করবে। আল্লাহ্ বলেন: “আল্লাহকে বাদ দিয়ে তুমি এমন কাউকে ডেকো না যে তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। এরূপ করলে তুমি যালেমদের অন-র্ভূক্ত হবে।” [সূরা ইউনুসঃ ১০৬]
যে ব্যক্তি মূর্তির কাছে মাথা নত করবে, কবরের কাছে বিনীত হবে, সে অবাস্তব বিষয় কামনা করবে, মরিচীকাকে পানি মনে করবে। আল্লাহ্ বলেন: “তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে, যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তকে আহ্বান করে যে কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবে না? অথচ তারা তাদের উক্ত আহ্বান সম্পর্কে বেখবর। কিয়ামত দিবসে যখন মানুষকে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হবে এবং তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে।” [সূরা আহকাফঃ ৫-৬]
মৃতকে আহবান করাঃ
মৃত মানুষের কাছে দু’আ করলে, তাদের কাছে প্রয়োজন পূরণের জন্যে আবেদন পেশ করলে তারা তা শুনতে পাবে না, কোন উপকারও করতে পারবে না। তাদের কাছে গিয়ে বিপদাপদ থেকে উদ্ধারও পাওয়া যাবে না। আল্লাহ্ বলেনঃ “আর তোমরা যাদেরকে আল্লাহ ব্যতীত ডাক তারা খেজুরের বিচির উপরে হালকা আবরণেরও মালিক নয়। যদি তোমরা তাদেরকে ডাক তারা তোমাদের ডাক শুনবে না। যদিও তারা শুনে কোন প্রতি উত্তর করবে না। আর তারা কিয়ামত দিবসে তোমাদের এই শির্ককে অস্বীকার করবে।” [সূরা ফাতেরঃ ১৩, ১৪]
মৃত নেক লোকদের নিয়ে বাড়াবাড়িই মানুষের কুফরীর মূল কারণ এবং ধর্ম পরিত্যাগ করার বড় মাধ্যম। এ বিষয়ে নবী মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন: “সাবধান তোমরা ধর্মের মধ্যে বাড়াবাড়ি করবে না, কেননা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে।” [নাসাঈ]
যারা নবী, পীর-ওলীর কবর-মাজারে ধর্ণা দেয় এবং তাদের কাছে দু’আ চায়, তারা সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মে সালামাকে বলেছিলেনঃ “ওরা (ইহুদী-খৃষ্টানরা) সেই জাতি, তাদের মধ্যে নেক বান্দা বা সৎ লোক মৃত্যু বরণ করলে, তারা তার কবরের কাছে মসজিদ নির্মাণ করেছে এবং তার মধ্যে তাদের প্রতিকৃতি স্থাপনন করেছে। তারা আল্লাহর নিকট সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বাধিক নিকৃষ্ট।” [বুখারী ও মুসলিম]
যাদু ও জ্যোতির্বিদ্যাঃ
যাদু ঈমানের আলো নিভিয়ে দেয়, ইসলামকে ধ্বংস করে। আল্লাহ্ বলেন: “তারা অবশ্যই জেনেছে যে, যারা উহা (যাদু) ক্রয় করবে, আখেরাতে তার কোন অংশ থাকবে না।” [সূরা বাকারাঃ ১০২]
জ্যোতির্বিদ ও গণকদের কাছে গমণ করা দ্বীনের মধ্যে বিরাট ত্রুটি এবং নির্বুদ্ধিতার কাজ। আল্লাহ্ বলেন: “আপনি বলে দিন, নভোমন্ডলে ও পৃথিবীতে আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।” [সূরা নমলঃ ৬৫]
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি জ্যোতিষী বা গণকের কাছে কোন কিছু জিজ্ঞেস করে (সে যা বলবে তা) সত্য বলে বিশ্বাস করবে, সে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপর নাযিলকৃত (ধর্মের) সাথে কুফরী করবে।” [আহমাদ]
তাবীজ-কবচ শির্কঃ
তাবীজ-কবচ, বালা, সূতা ইত্যাদি বস্তু পরিধান করলে ভয়-ভীতি ও দুর্বলতাই বৃদ্ধি পাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা জনৈক ব্যক্তির হাতে একটি হলুদ বর্ণের বালা পরিহিত অবস্থায় দেখতে পেলেন তখন বললেন, এটা কি? সে বলল, দুর্বলতা প্রতিরোধ করার জন্য এটা ব্যবহার করেছি। তিনি বললেন, ওটা খুলে ফেল। কেননা উহা তোমার দূর্বলতাকেই বৃদ্ধি করবে। এটা পরিহিত অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু হয়, তবে কখনই মুক্তি পাবে না।” [আহমাদ]
তাবীজ-কবচ ব্যবহার করা আল্লাহর সাথে শির্ক। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি তাবীজ ব্যবহার করবে, সে শির্ক করবে।” [আহমাদ]
আরোগ্য লাভ বা বদনযর অথবা জিন-ভূত থেকে রক্ষার জন্যে যে ব্যক্তি হাতে বা পায়ে বা গলায় বা শরীরের কোন স্থনে কিছু লটকিয়ে ব্যবহার করবে, আল্লাহ্ তাকে ঐ বস’র প্রতি সোপর্দ করবেন, ফলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকাবে, তাকে সেই বস্তুর প্রতি সোপর্দ করে দেয়া হবে।” [আহমাদ, তিরমিযী]
গাইরুল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনঃ
বৃক্ষ-লতা-পাতা, মাটি বা পাথর প্রভৃতির মধ্যে বরকতের আশা করা যায় না বা তা থেকে বরকত পাওয়ারও আশা করা যায় না। এগুলো আল্লাহর সৃষ্ট বস্তু। এগুলো কারো উপকার বা অপকার করতে পারে না। নৈকট্য লাভের আশায় আল্লাহ্ ব্যতীত কারো জন্যে পশু যবেহ করা যাবে না। যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর জন্যে পশু কুরবানী করবে সে শির্কের খন্দকে নিপতিত হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “গাইরুল্লাহর জন্যে যে ব্যক্তি পশু কুরবানী করবে তার উপর আল্লাহর লা’নত (অভিশাপ)। যে ব্যক্তি নিজের পিতা-মাতাকে লা’নত করবে তার উপর আল্লাহর লা’নত। যে ব্যক্তি বিদআতীকে (অপরাধীকে) আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর লা’নত। যে ব্যক্তি যমিনের সীমানা (আইল) নষ্ট করবে তার উপর আল্লাহর লা’নত।” [মুসলিম]
নযর-মানত একটি ইবাদত। আল্লাহ্ ব্যতীত কারো উদ্দেশ্যে মানত করা যাবে না। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করার মানত করবে সে যেন তা পূরা করে। আর যে ব্যক্তি তাঁর নাফরমানী করার মানত করবে, সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে।” (অর্থাৎ ঐ মানতকে পূরা করবে না। [বুখারী]
যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে, তিনি তাকে আশ্রয় দান করবেন। যে ব্যক্তি অন্যের স্মরণাপন্ন হবে তিনি তাকে লাঞ্ছিত করবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি (সফরে থাকাকালে) কোন সন্তানে বিরতি গ্রহণ করবে, সে যদি এই দু’আ পাঠ করেঃ أعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ ما خَلَقَ [আশ্রয় প্রার্থনা করছি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে -তাঁর সৃষ্টির সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে।] তবে উক্ত সন্তান থেকে প্রস্থান করা পর্যন্ত কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।” [মুসলিম]
বিপদ উদ্ধারের উপায় কি?
কখনো যদি তুমি বিপদ-মুসীবতে আক্রান্ত হও, তবে আল্লাহ্ ব্যতীত কারো নিকট উদ্ধার কামনা করবে না। তিনি ব্যতীত কাউকে ডাকবে না। পীর-ওলীর কবর বা মাজারে গিয়ে বিনায়বনত হবে না। তোমার প্রয়োজনের বিষয়টি আকাশের অধিপতি মহান আল্লাহর সুউচ্চ দরবারে উত্তোলন কর। কেননা তাঁর কাছেই রয়েছে এর প্রকৃত সমাধান। মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেনঃ “আল্লাহ্ ব্যতীত কে এমন আছে যে বিপদ গ্রস্থর ডাকে সাড়া দিতে পারে?” [সূরা নমলঃ ৬২]
বিপদাপদ থেকে পালানোর উপায় নেই। আল্লাহ্ বলেন: “মানুষ কি ভেবেছে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’; অথচ তাদেরকে (বিপদাপদ দ্বারা) পরীক্ষা করা হবে না।” [আনকাবূতঃ ২]
সন’ষ্টি ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিপদাপদের মোকাবেলা করবে। আল্লাহ্ বলেন: “যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, তার হৃদয়কে তিনি সুপথ দেখাবেন।” [সূরা তাগাবুনঃ ১১]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আলকামা (রহঃ) বলেন, সে এমন লোক হবে, যে বিপদাপদে পতিত হলে মনে করবে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। অতএব সে তাতে সন’ষ্ট থাকবে এবং বিষয়টিকে আল্লাহর উপরই সোপর্দ করবে। তকদীরে যা লিখা ছিল তা ঘটলে অসন্তুষ্ট হবে না রাগারাগি গালাগালি করবে না। কারণ এতে বিপদ দূর হবে না। সাবধান! অসতর্কতা বশতঃ কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ‘যদি’ শব্দ ব্যবহার করবে না। কেননা ওটা তকদীরে ছিল বলেই ঘটেছে। ‘যদি এরকম করতাম তবে ওরকম হত’ এধরণের কথা শয়তানের পক্ষ থেকে তকদীরের প্রতি অসন’ষ্টি প্রকাশের জন্যে হয়ে থাকে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:“উপকারী বিষয়ে আগ্রহী থাক এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। অক্ষমতা প্রকাশ কর না। অপ্রত্যাশিত কোন কিছু ঘটে গেলে একথা বলবে না: ‘যদি এরূপ করতাম তবে এরূপ হত এরূপ হত। কেননা (لو) ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কর্মের দরজা উন্মুক্ত করে।” [মুসলিম]
অতএব তোমার প্রতিটি বিষয় আল্লাহর উপর সোপর্দ কর। তিনি তোমার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তা ব্যতীত দুনিয়ার কিছুই তুমি পাবে না। আল্লাহ্ বলেনঃ “আপনি বলে দিন, আল্লাহ্ আমাদের জন্যে যা লিখে রেখেছেন তা ব্যতীত আমরা কোন কিছুই পাব না।” [সূরা তাওবাঃ ৫১]
উবাদা বিন সামেত (রাঃ) তাঁর পুত্রকে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ বৎস! তুমি কখনই ঈমানের স্বাদ পাবে না যে পর্যন্ত এই বিশ্বাস না করবে যে, যা পেয়েছো, তা তোমার থেকে ছুটে যাওয়ার ছিল না। আর তুমি যা পাওনি, তা তোমার ভাগ্যে ছিল না।
ভরসাঃ
দুনিয়াবী উপকরণের উপর অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা নির্ভর করা ত্রুটিপূর্ণ তাওহীদের পরিচয়। আবার উপকরণকে পরিত্যাগ করা অক্ষমতার পরিচয়। আবশ্যক হচ্ছে বৈধ উপকরণ গ্রহণ করে অন-রকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করা। আল্লাহর উপর ভরসা করলে কঠিন বিষয় সহজ হয়ে যায়। জীবিকা বৃদ্ধি হয়, বিপদ দূরীভূত হয়। আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ ভাবা আত্মপ্রবঞ্চনা। আল্লাহ্ বলেন: “ওরা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্থ জাতি ছাড়া কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে না।” [সূরা আ’রাফঃ ৯৯]
তিনি আরো বলেন:“আল্লাহর করুণা থেকে বিভ্রান- লোকেরা ব্যতীত কেউ নিরাশ হয় না।” [সূরা হিজরঃ ৫৬]
মধ্যপন্থা হচ্ছে ভালবাসার সাথে ভয়-ভীতি ও আশা-আকঙ্খাকে সংযুক্ত করা।
রিয়াঃ
শির্কের অনেক গোপন দরজা রয়েছে। শয়তান এ সকল দরজা দিয়ে বান্দার ভিতরে প্রবেশ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ“সর্বাধিক তোমাদের উপর যে বিষয়ের আশংকা করি তা হচ্ছে শির্কে আসগার বা ছোট শির্ক। উহা কি সে সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ উহা হচ্ছে রিয়া।” (বা লোক দেখানোর জন্যে নেক কর্ম সম্পাদন করা ) [আহমাদ]
আমলকারীদের জন্যে রিয়া একটি মারাত্মক রোগ। এতে আমল বিনষ্ট হয়ে যায়, আল্লাহ্ রাগান্বিত হন। নেককারদের জন্যে রিয়া দাজ্জালের চাইতে অধিক ভীতিকর। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাদের বলব না আমার মতে তোমাদের জন্যে কোন বিষয় দাজ্জালের চেয়ে অধিক ভয়ানক? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ বলুন! তিনি বললেন: তা হল গোপন শির্ক। উহা এইরূপ যে, কোন মানুষ সালাত আদায় করতে দন্ডায়মান হবে, অতঃপর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে তার সালাতকে সুসজ্জিত করবে।” [ইবনে মাজাহ্]
দুনিয়ার উদ্দেশ্যে নেক আমলঃ
নেক আমল দ্বারা শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান আশা করতে হয়। তা দ্বারা দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্য করতে হয় না। যে ব্যক্তি নেক আমলের মাধ্যমে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিলের নিয়ত করবে, তার আমল বাতিল হয়ে যাবে, সে হবে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্থ। আল্লাহ্ বলেন: “যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন এবং তার চাকচিক্যই কামনা করে, আমি দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দিব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হবে না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্যে আগুন ছাড়া কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।” [সূরা হূদঃ ১৫-১৬]
গাইরুল্লাহর নামে শপথঃ
মুসলমানের নিকট আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ যেমন অধিক ভালবাসার পাত্র নেই। তেমনি তিনি ব্যতীত কেউ অধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী নেই। আল্লাহই তার হৃদয়ে সুমহান ও সর্বোচ্চ। সত্যিকারভাবে তাঁকে মুহাব্বতকারী তিনি ব্যতীত কারো নামে শপথ করতে পারে না। তিনি ব্যতীত অন্যের নামে শপথ যেমন: কা’বা, নবী, আমানত, ওলী-আউলিয়া বা পিতা-মাতার নামে শপথ করা আল্লাহর তাওহীদের মধ্যে শির্ক। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে শপথ করে সে কুফরী করে বা শির্ক করে।” [তিরমিযী]
কথায় কথায় শপথ করা অন-রে আল্লাহর প্রতি সম্মানের পরিপন্থী কাজ। অতএব সত্য-সঠিক বিষয়েও শপথ কম করার চেষ্টা করবে। আল্লাহ্ বলেন: “তোমরা স্বীয় শপথ সমূহ সংরক্ষণ কর।” [মায়েদাঃ ৮৯]
সাবধান! মিথ্যা শপথ করবে না। কেউ যদি আল্লাহর নামে শপথ করে কিছু বলে তবে তাতে সন’ষ্টি প্রকাশ করা তাঁকে সম্মান করার পরিচয়- যদিও শ্রবণকারী বুঝতে পারে যে শপথকারী মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “তোমরা বাপ-দাদার নামে শপথ করবে না। কেউ আল্লাহর নামে শপথ করলে যেন সত্য কথা বলে। যার সামনে আল্লাহর শপথ দিয়ে কিছু বলা হয় সে যেন তাতে সন’ষ্ট হয়। যে তাতে সন’ষ্ট হয় না, সে আল্লাহকে সম্মানকারী নয়।” [ইবনে মাজাহ্]
আল্লাহর উসীলা দিয়ে ভিক্ষা চাওয়াঃ
কেউ যদি আল্লাহর নাম নিয়ে ভিক্ষা চায় তবে তাকে ফিরিয়ে না দেয়া আল্লাহকে সম্মানের পরিচয়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর উসীলায় আশ্রয় চায় তোমরা তাকে আশ্রয় দাও। যে লোক আল্লাহর ওয়াস্তে ভিক্ষা চায় তাকে তোমরা দান কর। তোমাদেরকে কেউ (পানাহারের) দা’ওয়াত দিলে তা কবূল কর।” [আবু দাউদ]
আবহাওয়ার বিভিন্ন অবস্থায় যেমন কঠিন গরম বা ঠান্ডা বা ঝড়-ঝঞ্ঝা ইত্যাদিকে গালিগালাজ করলে, যুগকে মন্দ বললে জগতের পালনকর্তা আল্লাহকে কষ্ট দেয়া হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়। সে যুগকে গালি দেয়। আমিই তো যুগ। আমার হাতেই সবকিছু। আমিই রাত-দিনের মধ্যে পরিবর্তন করে থাকি।” [বুখারী]
দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ কুফরীঃ
দ্বীনের জন্যেই তো আল্লাহ্ আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন। জান্নাত-জাহান্নাম প্রস্তুত করেছেন। দ্বীন ইসলাম বা বা এর কোন বিধান নিয়ে অথবা দ্বীনদ্বারদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। আল্লাহ্ বলেন: “যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম, এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ্র সাথে, তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে ও তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছিলে। ছলনা করো না। ঈমান গ্রহণ করার পর তোমরা কাফের হয়ে গেছো।” [সূরা তাওবাঃ ৬৫-৬৬]
আল্লাহর উপর এমন কুধারণা পোষণ করবে না যে, তিনি তোমাকে যা দিয়েছেন তুমি তার চাইতে বেশী পাওয়ার হকদার ছিলে। আল্লাহ অপরকে যে নি’য়ামত প্রদান করেছেন তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না। এগুলো মূর্খদের কাজ। জগতের সব কিছুই আল্লাহর নির্দেশে ও তাঁর হেকমতেই হয়ে থাকে। আল্লাহ্ বলেন: “আল্লাহ্ সম্পর্কে মূর্খদের মত তারা মিথ্যা ধারণা পোষণ করছিল। তারা বলছিল আমাদের হাতে কি কিছুই করার নেই? আপনি বলুন, সব কিছুই আল্লাহর হাতে।” [আল ঈমরানঃ ১৫৪]
মূর্তি-ভাস্কর্যের হুকুমঃ
ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মাণ করা কাবীরা গুনাহ। এগুলো প্রন্তুতকারীকে জাহান্নামের ভয় দেখানো হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “ছবি-মূর্তি অঙ্কনকারী প্রত্যেক ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে। তার অঙ্কিত প্রত্যেকটি ছবিতে প্রাণ দিয়ে তা দ্বারা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে।” [বুখারী ও মুসলিম]
তোমার পালনকর্তাকে যথাযথভাবে সম্মান কর। কেননা তিনি নিজের রাজত্বে সুমহান। সুউচ্চ আরশে সমাসীন। বিধি-বিধান প্রণয়নে সুবিজ্ঞ। তিনি তোমার উপর যা ফরয করেছেন তার প্রতি যত্নবান হও। বিশেষ করে যথাসময়ে সালাত আদায় করতে সচেষ্ট হবে। সাবধান সালাতে কোন প্রকার গাফলতি করবে না। কেননা উহা ধর্মের মূল খুঁটি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আমাদের এবং তাদের (কাফেরদের) মাঝের চুক্তি হচ্ছে সালাতের। যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করবে সে কুফরী করবে।” [তিরমিযী]
তোমার সার্বিক বিষয়ে পালনকর্তার স্মরণাপন্ন হও, তোমার যাবতীয় আমল সংশোধন ও বিশুদ্ধ হবে।
গান-বাদ্য শ্রবণঃ
গান-বাদ্য শ্রবণ এমন একটি অন্যায়, যার কারণে অন্তরে অন্ধকার সৃষ্টি হয়। উহা কুরআন শোনার পথে বড় বাধা। অথচ গানে কোনই উপকার নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আসবে যারা ব্যাভিচার, রেশমের কাপড়, মদ্যপান এবং গান-বাদ্যকে হালাল গণ্য করবে।” [বুখারী]
বান্দার শ্রবণ করার জন্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু জগতের পালনকর্তা আল্লাহর বাণী। তাঁর বাণীতেই আছে হৃদয়ের আলো, জীবনাদর্শ এবং আত্মীক ও শারীরিক আরোগ্য।
হারাম দৃষ্টিপাতঃ
বেগানা নারীদের থেকে দৃষ্টিকে অবনত রাখা অন-রের পবিত্রতা, মান-সম্মানে উন্নতী এবং আল্লাহর আনুগত্যের প্রমাণ। আল্লাহ্ বলেন: “ঈমানদারদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্যে আছে পবিত্রতার উত্তম ব্যবস্থা” [সূরা নূর- ৩০]
পর্দা ও পবিত্রতাঃ
পর্দা নারীর অলংকার। পর্দাতেই তার প্রকৃত সৌন্দর্য। ধর্মের বিধান মেনে চলাতেই রয়েছে তার দু’নিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্য। পর্দা, গোপনীয়তা ও লজ্জার অনুসরনীয় মডেল হচ্ছেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর মহিলা সাহাবীগণ। আল্লাহ্ বলেন: “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” [সূরা আহযাব- ৫৯]
হালাল উপার্জনঃ
হালাল সম্পদের মাধ্যমে ধর্ম বিশুদ্ধ হবে, শরীরে শক্তি সঞ্চয় হবে, সন্তান সুষ্ঠু লালন-পালন হবে, অর্থ ব্যয়ে বরকত হবে, দু’আ কবূল হবে, নবী-রাসূলদের অনুসরণ হবে। আল্লাহ্ বলেন: “হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার্য গ্রহণ কর এবং সৎকর্ম কর। [সূরা মু’মিনুনঃ ৫১]
ফিৎনা থেকে বিরত থাকাঃ
মুসলমানের উপর আবশ্যক হচ্ছে যাবতীয় ফিৎনা থেকে দূরে থাকা। কেননা ফিৎনায় পতিত হলে অন্তর বিনষ্ট হয় দ্বীনের ক্ষতি হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি ফিৎনার দিকে উঁকি দিবে, সে তাতে নিপতিত হবে।” [বুখারী]
অতএব সন্দেহ-সংশয় ও প্রবৃত্তি থেকে দূরে থাক এবং নিজের দ্বীনকে রক্ষা কর। কেননা এর প্রভাবে মানুষের ঈমান ধ্বংস হবে, আখেরাত নষ্ট হবে; অথচ সে তা অনুধাবন করতে পারবে না।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে মু’মিন বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। (ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ ওয়া আলিহি ওয়া সাহবিহি আজমাঈন।)
মূলঃ ডঃ আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মাদ আল কাসেম
ইমাম ও খতীব, মসজিদে নববী, সৌদী আরব
অনুবাদঃ মুহাঃ আবদুল্লাহ্ আল কাফী
প্রকাশনাঃ ইসলামিক সেন্টার, মদীনা মুনাওয়ারা, সঊদী আরব।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
Nice Article. Brother where from can i buy the book published by Darus-Salam.
Please inform me.Thanks
excellent article. we want more regular update………..pray for me every muslim sothat they can lead their following ALLAH’s rule…………manay many thanks.
This lecture also will help to overcome desire inshaAllaah.
https://whimsikill.com/free-download/
Alhumdulillah! This article helped me a lot….Alhumdulillah!
যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। (২:২৫৭)
হে আল্লাহ আমি প্রকাশ্যে,গোপনে ইচ্ছায়,অনিচ্ছায়,দেখে না দেখে কবিরা,ছগিরা যত গুনাহ করেছি জুমার দিনের উচিলায় সব গুনাহ মাফ করে দা*
jara uae te ahen amake janaben quraneralo web site open hoy ki? amar mobile o computare kono babe open hoy na