মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইউরোপ জুড়ে মুসলিমদের একটা গৎবাঁধা নেতিবাচক ছবি তুলে ধরার কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এবং বৈষম্য আরও বাড়ছে। রিপোর্টে মুসলিমদের বিরুদ্ধ বৈষম্যের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ইউরোপে এখন মুসলিম মহিলারা কেবল মাত্র হিজাব পরার কারণে চাকুরি পাচ্ছে না, মেয়েদের স্কুলে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। মুসলিম পুরুষরা কেবল মাত্র দাড়ি রাখার কারণে চাকুরিচ্যূত হচ্ছেন।
ইউরোপে মুসলিমরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এটা নতুন কোন অভিযোগ নয়। কিন্তু এই বৈষম্যের সার্বিক চিত্র নিয়ে অ্যামনেস্টির মতো একটি মানবাধিকার সংস্থার তরফ থেকে এরকম ব্যাপক এবং পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এটাই প্রথম বলা যেতে পারে।
মুসলিমদের প্রতি অসিহষ্ণুতা
১২৩ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে অ্যামনেস্টি বলছে, ইউরোপ জুড়ে মুসলিমরা তাদের ধর্ম পালন থেকে শুরু করে শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র —সব জায়গাতেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
অ্যামনেস্টির রিপোর্টের ভাষায়, ইউরোপীয় দেশগুলো অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি অন্য এক সংকটের মুখে , সেটা হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধের সংকট এবং এই সংকটের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে মুসলিমদের প্রতি তাদের অসহিষ্ণু আচরণে। ইউরোপ এখন অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ভুগছে মানবিক মূল্যবোধের সংকটে এবং এই সংকটের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে মুসলিমদের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণে (অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট)
এরকম একটা বিষয় নিয়ে অ্যামনেস্টি এই মূহুর্তে কেন এই রিপোর্ট প্রকাশ করলো, সে প্রশ্নের উত্তরে সংস্থার মুখপাত্র ইউযেরটা টিগানি বলেন, “শুধু অ্যামনেস্টি নয়, অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণেও দেখা যাচ্ছে যে ইউরোপের মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দিনে দিনে বাড়ছে, তারা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা এবং ধর্মবিশ্বাসের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। এ কারণেই অ্যামনেস্টি এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।“
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন বাস করেন প্রায় সাড়ে চার কোটি মুসলিম এবং কোন কোন দেশে তারা এখন জনসংখ্যার এক উল্লেখযোগ্য অংশ। তবে এই রিপোর্টে নজর দেয়া হয়েছে মূলত পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ –বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইটজারল্যান্ড এবং স্পেনের মুসলমানদের অবস্থার দিকে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মুখপাত্র ইউযেরটা টিগানি এ প্রসঙ্গে বলেন, “এই পাঁচটি দেশকে বাছাই করা হয়েছে এই কারণে যে এসব দেশে সম্প্রতি আমরা মুসলিমদের ব্যাপারে আচরণে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করছি। যেমন ধরুণ মুসলিম মহিলাদের মুখ ঢাকা বোরকা পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা। এই রিপোর্টে আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি এসব দেশে মুসলিমরা কিভাবে শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র সহ বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।“
ধর্ম পালনে বাধা
ইসলাম সম্পর্কে গতানুগতিক নেতিবাচক ধারণা ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বাড়াতে চাইছে (ইউযেরটা টিগানি, অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল)
আ্যামনেস্টি মুখপাত্র ইউযেরটা টিগানি আরও বলেন, ধর্মপালনের অধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকারগুলোর একটি। ইউরোপের এই দেশগুলোর সব কটির সংবিধানে ধর্মপালনের অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মুসলিমরা তাদের দৈনন্দিন প্রার্থনা করতে গিয়েও সেখানে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
স্পেনের উদাহারণ দিয়ে ইউযেরটা টিগানি বলেন, “সেখানে কাতালোনিয়া অঞ্চলে আমরা দেখেছি, সেখানে মুসলমানদের প্রার্থনা করার মতো মসজিদ নেই বললেই চলে। নামাজ পড়ার মতো এখন যে জায়গাগুলো আছে, সেগুলো হয় খুবই অপরিসর, সবার জায়গা হয় না, তাই লোকজনকে বাইরে খোলা জায়গায় জড়ো হয়ে নামাজ পড়তে হয়। আর সুইটজারল্যান্ডে তো ওরা সংবিধান সংশোধন করে মসজিদের মিনার তৈরীই নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম সম্পর্কে যে স্টিরিওটাইপ বা গতানুগতিক ধারণা এখন বিরাজ করছে, রাজনৈতিক দলগুলোও যে তা ব্যবহার করে ভোট বাড়াতে চাইছে, এ হচ্ছে তার একটা বড় উদাহারণ।“
অ্যামনেস্টি রিপোর্টে বলা হয়, ইউরোপ জুড়ে এই মুসলিম বিদ্বেষ মোকাবেলায় সরকারগুলোর নীতি যে খুব সহায়ক, তা বলা যাবে না। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারী নীতি এই নেতিবাচক ভাবমূর্তিকে বরং আরও দৃঢ় করছে।রিপোর্টে বলা হয়, বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসে মুসলিমরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হলেও সেখানে এরকম বৈষম্যবিরোধী আইন থাকার পরও তা প্রয়োগ করা হয়নি। এই ইসলাম বিদ্বেষের সঙ্গে এখন আবার যুক্ত হয়েছে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গী। মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই বিদ্বেষ এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর বিরুদ্ধে একটা জোরালো অবস্থান নেয়ার জন্য অ্যামনেস্টি ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
উৎসঃ বিবিসি বাংলা
মূল রিপোর্টঃ Muslims discriminated against for demonstrating their faith | PDF
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]