মাতৃভাষাঃ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন

2
2761

সঙ্কলন এবং সম্পাদনাঃ কুরআনের আলো ওয়েবসাইট

মহান আল্লাহর প্রিয় ও সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে মানব জাতি। এই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বা আশরাফুল মাখলুকাত তাদের মনের ভাব, হৃদয়ের আকুতি, অন্তরের ব্যাকুলতা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। এই ভাষা আল্লাহর দান। মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এই ভাষা এক অমূল্য ও অতি বড় নেয়ামত। মহান আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জাতিকে বিভিন্ন ভাষা দান করেছেন, প্রত্যেকেই যার যার ভাষাতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।  আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন বাকশক্তি বা কথা বলার ক্ষমতা দান করেছেন। আল্লাহ বলেন: ‘দয়াময় আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা।’ [সূরা আর-রহমান, আয়াত ১-৪] অর্থাত্ আল্লাহ মানুষকে তার মনের ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের অফুরন্ত ভাণ্ডার ঘিরে রেখেছে সৃষ্টিকুলকে। তার কোনো নেয়ামতই গুরুত্বের দিক থেকে কম নয়। তবে কিছু কিছু নেয়ামত প্রয়োজন ও অপরিহার্যতার বিচারে একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্রষ্টা তাদের যে ভাষার নেয়ামত দান করেছেন সেটাও এর অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আকাশমালা ও যমীনের সৃষ্টি, তোমাদের পারস্পরিক ভাষা ও বর্ণ বৈচিত্র (নিসন্দেহে) তাঁর (কুদরতের) নিদর্শনসমূহের মাঝে (এক একটি বড়ো নিদর্শন); অবশ্যই জ্ঞানবান মানুষদের জন্যে এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে।” [সূরা আর রোমঃ ২২]

আয়াতটির তাফসীরঃ “আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের নিদর্শন সকল সৃষ্টিব্যপী পরিব্যপ্ত। বিশ্ব চরাচরে সকল কিছুই তারই জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও শিল্প নৈপুন্যের স্বাক্ষর। এই আয়াতে দুইটি বিশেষ উদাহরণকে তুলে ধরা হয়েছে আল্লাহ্‌র নিদর্শনকে উপস্থাপনার জন্য। মানুষের ভাষার বিভিন্নতা ও রং এর বৈচিত্রতার প্রতি এখানে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ভৌগলিক বিভিন্নতার জন্য দেশে দেশে ভাষা, সংস্কৃতি, জীবন ধারা, প্রভৃতির কতই না পার্থক্য। এসব বিভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে স্রষ্টার ইচ্ছা অনুযায়ী। সুতারাং কেউ যেনো মনে না করে যে ,কোনও ব্যাপারে তারাই শ্রেষ্ঠ। আবার আকাশ, পৃথিবী ও ভূমন্ডলে কত না রং এর বৈচিত্র ছড়ানো। নীল আকাশে সূর্যদয় ও সূর্যাস্তে মেঘের রং এর খেলা থেকে শুরু করে বৃক্ষ তরুলতা, ফুল, ফল, ফসল, প্রাণী মানুষের মাঝে সর্বত্রই রংএর বৈচিত্র। সকল মানুষের আদি পিতা মাতা আদম ও হাওয়া সত্বেও যুগের পরিক্রমায় এই একক পিতা-মাতার পরবর্তী বংশধরেরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে – ফলে পৃথিবীর ভৌগলিক অবস্থানের বিভিন্নতার কারণে তারা বিভিন্ন গাত্রবর্ণ ও ভাষার অধিকারী হয়। কিন্তু উপলব্ধি করার বিষয় হচ্ছে, জাতিতে-জাতিতে, গোত্রে-গোত্রে, ভাষাতে-ভাষাতে যত বিভিন্নতাই থাকুক না কেন তাদের মূল ঐতিহ্য একই রয়ে গেছে। তাদের আবেগ ও অনুভূতি একই ধারাতে প্রবাহিত – সুখ ও দুঃখের সংজ্ঞা এক, সুখ ও শান্তির উপলব্ধি অভিন্ন। কারণ সকলেই তারা এক আল্লাহ্‌র বান্দা। এ কথাই কবি বলেছে, ” জগত জুড়িয়া আছে এক জাতি, সে জাতির নাম মানুষ জাতি।”

পৃথিবীর বিবর্তনের ধারায় পুরানো ভাষার অবলুপ্তি ঘটে। আবার নূতন ভাষার সৃষ্টি হয় – নূতন শব্দে সমৃদ্ধ হয়ে নূতন প্রকাশ ভঙ্গীতে, নূতন আঙ্গিকে বিকশিত হয়। পৃথিবী সর্বদা পরিবর্তনশীল , এই-ই আল্লাহ্‌র নিয়ম। যারা জ্ঞানী অর্থাৎ অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন তারা আল্লাহ্‌র এ সকল নিদর্শনকে আত্মার মাঝে উপলব্ধিতে সক্ষম। আবার এ সকল নিদর্শন উপলব্ধির মাধ্যমে আত্মার মাঝে জ্ঞানের বা অন্তর্দৃষ্টি বা দিব্যজ্ঞানের উদ্ভব ঘটে।”  [ উৎস : মাওলানা আবদুল্লাহ্‌ ইউসুফ আলীর ইংরেজী তাফসীর অনুসরনে অনুবাদ]

সুলায়মান (আঃ) পাখী, পিপড়াদের ভাষা বুঝতে পারতেন। এই ভাষা বুঝতে পেরে সুলায়মান (আঃ) কিন্তু গর্ব করেননি, অহংকার করেন নি কিংবা অন্যদের বলে বেড়াননি আমি যা জানি তোমরা তা জান না! তিনি পাখী, পিপড়াদের ভাষা বুঝতে পেরে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করেছেন, আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন, আল্লাহ যেন তাকে সৎকর্মশীলদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেন। “তখন একটি স্ত্রী পিপড়া বললো, হে পিপীলিকার দল, তোমরা (দ্রুত) নিজ নিজ গর্তে ঢুকে পড়ো, (দেখো) এমন যেন না হয় সুলায়মান ও তার বাহিনী নিজেদের অজান্তে তোমাদের পায়ের নীচে পিষে ফেলবে। তার কথা শুনে সুলায়মান একটু মৃদু হাসি হাসলো এবং বললো, হে আমার মালিক, তুমি আমাকে তাওফীক দাও যাতে করে আমাকে ও আমার পিতামাতাকে তুমি যেসব নিয়ামত দান করেছ, আমি যেন (বিনয়ের সাথে) তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি, আমি যেন এমন সব নেক কাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো, (অতপর) তুমি তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে তোমার নেককার মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও।” [সূরা আন নামলঃ ১৮-১৯]

একটু লক্ষ্য করুন, দেখুন কি চমৎকার শিক্ষা রয়েছে আমাদের জন্যে। সুলায়ামান (আঃ) পিপড়াদের ভাষা বুঝতে পেরে আল্লাহর সন্তুষ্টি সহকারে তৃপ্তির হাঁসি হাঁসলেন এরপর কি চমৎকার দোয়া করলেন আল্লাহ তাআলার নিকট। সুলায়ামন (আঃ) বললেন, হে আমার মালিক, তুমি আমাকের তাওফীক দাও যাতে করে আমাকে ও আমার পিতামাতাকে তুমি যেসব নিয়ামত দান করেছ, আমি যেন (বিনয়ের সাথে) তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি অর্থাৎ আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা আদায় করার তাওফীক চাইলেন। এরপর কৃতজ্ঞতা কিভাবে আদায় করবেন তারও চমৎকার বর্ণনা দিলেন, আমি যেন এমন সব নেক কাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো অর্থাৎ ঐসকল কাজ যা করতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, যেসকল কাজ করলে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন। এরপর নেককাজ গুলো যেন আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত নেক বান্দাহদের মতো হয়, আল্লাহ যেন সেই নেক মানুষদের অন্তর্ভূক্ত করে নেন আর তাই তিনি বললেন, (অতপর) তুমি তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে তোমার নেককার মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও। আলহামদুলিল্লাহ, কি সুন্দর শিক্ষণীয়, চমৎকার একটি দৃষ্টান্ত।

আমরা আমাদের মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলি, এটা আল্লাহ তাআলার একটা অশেষ নিয়ামত আমাদের জন্যে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আর এই কৃতজ্ঞতা আদায় করতে যেয়ে আমাদের আল্লাহর পছন্দীয় কাজ করতে হবে এবং অপঞ্ছন্দনিয় সব কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

2 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুনCancel reply