লেখক: শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল-আরিফী | অনুবাদক: কাজী মুহাম্মদ হানিফ
রাসূল আগ্রা দাস-দাসী ও অধীনস্থদের মনও যেভাবে দরকার সেভাবে জয় করে নিতেন। যেভাবে কথা বললে তারা খুশি হবে তাদের সাথে সেভাবে কথা বলতেন। তাদের মনােভাব ও আবেগ অনুভূতি বােঝার চেষ্টা করতেন। যতদিন চাচা আবু তালেব বেঁচে ছিলেন। ততদিন রাসূল মােটামুটি নিরাপদ ছিলেন। কিন্তু চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর পর কোরাইশরা রাসূলকে নিপীড়ন করার সীমা ছাড়িয়ে গেল। তাই রাসূল সাঃ তায়েফে গেলেন। রাসূল মনে করেছিলেন, সাকীফ গােত্র তাকে সাহায্য করবে। তিনি যে দীন নিয়ে এসেছেন তারা তা গ্রহণ করবে।
এ আশায় বুক বেঁধে তিনি একাই তায়েফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। যথাসময়ে তিনি তায়েফে পৌছলেন। সেখানকার সাকিফ গােত্রের বড় বড় তিনজন নেতার সাথে তিনি সাক্ষাৎ করলেন। তারা ছিল সহােদর ভাই । একজনের নাম আবদে ইয়ালীল, অন্যজনের নাম মাসুদ, আর তৃতীয়জনের নাম হাবীব। তাদের পিতা ছিল আমর বিন ওমায়ের। রাসূল একা তাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিলেন। ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানালেন। আর মক্কার যেসব লােক তার বিরােধীতা করছে তাদের বিরুদ্ধে রাসূলকে সাহায্য করার অনুরােধ জানালেন। কিন্তু তারা কঠোর ভাষায় রাসূল -এর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলাে। একজন বললাে, আল্লাহ যদি তােমাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়ে থাকেন তাহলে আমি কাবার গিলাফ ছিড়ে ফেলব। অন্যজন বললাে, আল্লাহ কি তােমাকে ছাড়া নবী বানানাের মতাে আর কাউকে পান নি? তৃতীয়জন দার্শনিকের ভঙ্গিতে বললাে, আমি তােমার সঙ্গে কথাই বলব না। কারণ তুমি যদি সত্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল হয়ে থাক তাহলে তােমার কথার জবাব দেয়া আমার জন্য বিপজ্জনক!
আর যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক তাহলে তাে তােমার সঙ্গে আমার কথা বলার কোনাে প্রয়ােজনই নেই। তাদের এ অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তর শুনে রাসূল তাদের কাছ থেকে চলে এলেন। তিনি সাকীফ গােত্রের কাছ থেকে কল্যাণকর কিছু পাওয়ার আশা ছেড়ে দিলেন। তবে তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে, তায়েফবাসীর এ প্রত্যাখানের সংবাদ জানতে পারলে কোরাইশরা আরাে দুঃসাহসী হয়ে উঠবে। তারা আগের চেয়ে বেশি উৎপীড়ন করবে। তাই তিনি তাদেরকে বললেন, ‘তােমরা আমার কথা না মান কিংবা আমার সহযােগিতা না কর তাতে আপাতত দুঃখ নেই, কিন্তু আমি যে তােমাদের কাছে এসেছিলাম তা কাউকে জানিয়ে দিয়াে না। এটা গােপন রেখ। কিন্তু তারা তা মানল না; বরং রাসূল এলাকা-কে নিপীড়ন করার জন্য তারা নিজেদের কিছু ক্রীতদাস ও নির্বোধ লােককে তার পেছনে লেলিয়ে দিল। তারা তাকে গালি দিতে লাগল, চিৎকার করে তাকে বিদ্রুপ করতে লাগল। তাদের এই চেঁচামেচিতে রাসূলের আশপাশে অনেক মানুষ জড়াে হয়ে গেল।
এভাবে উপহাস করতে করতে তারা তাকে রাবীয়ার পুত্র ওতবা ও শায়বার একটি বাগান পর্যন্ত নিয়ে গেল। এরপর তারা চলে গেল। ওতবা ও শায়বা তখন বাগানেই ছিল। রাসূল এলাকায় সে বাগানে প্রবেশ করে একটি আঙুর গাছের ছায়ায় হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। ওতবা ও শায়বা রাসূলকে দেখতে পেলাে । তায়েফবাসীদের পক্ষ থেকে তিনি যে নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তাও তারা দেখেছিল। এটা দেখে তাদের অন্তরে রাসূলের প্রতি মায়া লাগল । তারা তাদের এক খৃস্টান গােলাম আদ্দাসকে ডেকে বললাে, গাছ থেকে এক থােকা আঙুর পেড়ে তশতরিতে রেখে গাছের নীচে হেলান দিয়ে বসে থাকা ঐ লােকটিকে খেতে দিয়ে এসাে। আদ্দাস আঙুর নিয়ে আল্লাহর রাসূলের সামনে রেখে বললাে, নিন, এখান থেকে খান। আল্লাহর রাসূল হাত বাড়িয়ে বিসমিল্লাহ বলে খেতে লাগলেন। আদ্দাস বললাে, “আল্লাহর শপথ! আপনি যে শব্দটি উচ্চারণ করলেন তা তাে এ অঞ্চলের কারাে মুখে শুনি নি। রাসূল সায় তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আদ্দাস! তােমার আসল বাড়ি কোথায়? তুমি কোনাে ধর্মের অনুসারী?
সে বললাে, “আমি খৃষ্টধর্মের অনুসারী আর আমার বাড়ি নীনওয়ায়। আল্লাহর রাসূল হতে বললেন, তুমি কি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ইউনুস বিন মাত্তার এলাকার লােক? আদ্দাস বললাে, “ইউনুস ইবনে মাত্তাকে আপনি চেনেন? রাসূল অঙ্গ বললেন, তিনি আমার ভাই । তিনি নবী ছিলেন। আমিও নবী। এ কথা শুনে আদ্দাস রাসূলের কপালে ও হাতে-পায়ে চুমু খেতে লাগল। ওতবা এবং শায়বা এ দৃশ্য দেখে একে অপরকে বলতে লাগল, মুহাম্মদ আমাদের গােলামের মাথাটাও নষ্ট করে দিল! এরপর আদ্দাস তার মালিকের কাছে ফিরে এল। তার চেহারায় রাসূল একা-এর দর্শন ও কথােপকথনের বিশেষ দ্যুতি চকচক করছিল। তার মালিক তাকে বললাে, কী ব্যাপার, আদ্দাস! তুমি লােকটার কপালে ও হাতে-পায়ে চুমু খেলে কেন?
আদ্দাস বললাে, মনিব আমার! পৃথিবীতে এই লােকটির চেয়ে উত্তম আর কেউ নেই। তিনি আমাকে এমন তথ্য দিয়েছেন, যা কোনাে নবী ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারেন না। এ কথা শুনে তার মনিব বললাে, আদ্দাস! যাই হােক তুমি! সাবধান থেকো। সে যেন তােমাকে তােমার ধর্ম থেকে বিচ্যুত করতে না পারে। তােমার ধর্ম তাে তার ধর্মের চেয়ে অনেক ভাল। প্রিয় পাঠক, শ্রেণি, পেশা ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমাদের আচরণকে আমরা কি সবচেয়ে সুন্দর করতে পারি না?
এক পলক… মানুষকে মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন। মানুষের সঙ্গে একজন মানুষ হিসেবেই আচরণ করুন। ধর্ম-বর্ণ, বংশ-গােত্র ও পেশা-পদবীর প্রতি লক্ষ করবেন না।
উৎসঃ Enjoy Your Life (Bangla Version) , অধ্যায়ঃ ১২, পৃষ্ঠা: ৬১ – ৬৩
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]