ক্ষমা প্রার্থনার সাথে দুটি জিনিস জড়িয়ে থাকে অবিচ্ছেদ্যভাবে, একটি অনুতাপ ও অনুশোচনা আরেকটি হল আন্তরিকতা। এ দুইটি বৈশিষ্ট্যের অভাব থাকলে যে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়, তা প্রকৃতপক্ষে জিহবার নড়াচড়া ছাড়া কিছুই নয়, এবং নিজেই নিজেকে ধোঁকা দেয়া হয়। খারাপ কাজ হতে দূরে থেকে তাকে ঘৃণা করা, হৃদয় ও কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়নের তওবা প্রকৃত তওবা তথা অনুশোচনা । যে তিনটি বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকলে একজন মানুষ ঈমানের স্বাদ লাভ করতে থাকে তার একটি হল: “কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত ঘৃণা করা।” [বুখারি-হাদিস নং১৫]
আত্মুতুষ্টি : রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “তোমাদের প্রত্যেকেই প্রতি মুহুর্তে ভুল ত্রুটি করছো, তোমাদের মাঝে তারাই উত্তম যারা ভুল করার পরে বারবার তওবা করে”। তিনি আরো বলেন , “যার হাতে আমার জীবন (আল্লাহ) তাঁর শপথ, যদি তোমরা পাপ (ভুল ত্রুটি) না করতে , তাহলে আমি তোমাদের আরো বড় একটি বিপদের আশংকা করি, যা অধিক গুরুতরো ; তা হল আত্মতুষ্টি।”
ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্ব:
ক্ষমা প্রার্থনার ফলে আমরা যে সকল ভুল ত্রুটি করে থাকি তার শাস্তি মাফ হয়ে যায়, অনুতাপ অনুশোচনার কান্না খারাপ কাজগুলোকে ঢেকে দেয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বারবার ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি আদেশ করেছেন। আল্লাহ মহাপবিত্র, মহামহিম বলেন, “এবং তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।” [সূরা মুযযাম্মিল ৭৩:২০]
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, “যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে , অতপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।” [সূরা আন-নিসা ৪:১১০]
হযরত আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন: কোন মুসলমানের পক্ষ হতে কোন গুনাহ হয়ে গেলে তার উচিত পাক সাফ হয়ে দু রাকায়াত নফল নামায পড়া এবং আল্লাহর দরবারে গুনাহ হতে মাফ চাওয়া। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করে দেবেন। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন: “এবং তাদের অবস্থা এই যে, যদি কখনও তাদের দ্বারা কোন অশ্লীল কাজ হয়ে যায় অথবা তারা কোন গুনাহ করে নিজেদের উপর যুলুম করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তাদের আল্লাহর কথা স্মরণ হয় এবং তাঁর কাছে তারা গুনাহ মাফ চায়। কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করতে পারে ? এবং তারা তাদের কৃত অপরাধের জন্যে জ্ঞাতসারে জিদ ধরে না।” [আলে ইমরান-১৩৫]
কখন কতবার ক্ষমা প্রার্থনা করব:
ক্ষমা প্রার্থনা, তওবা কবুল হওয়া নির্ভর করে আল্লাহ পাকের ঊপর। যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে তিনি বান্দার প্রার্থনায় সাড়া দেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। এটি বেশি সম্ভব হবে যদি একেবারে অন্তর থেকে দুয়া করা হয়ে থাকে এবং সত্যিই খারাপ কাজে আর কখনও ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প থাকে। আর কিছু বিশেষ সময়ে করা প্রার্থনাও অধিক কবুল হয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) বলেন , রাতের শেষ সময়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার দিকে নাযিল হন এবং বলেন, “ডাকার জন্যে কেউ আছে কি যার ডাক আমি শুনব, চাওয়ার জন্যে কেউ আছে কি যাকে আমি দেব, গুনাহ মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি যার গুনাহ আমি মাফ করব?” [সহীহ বুখারী]
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি দৈনিক সত্তর বার আলাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তওবা করি।” [সহীহ বুখারি, কিতাব আদ-দাওয়াত-১১/১০১]
প্রতি মুহুর্তেই আমরা জেনে, না জেনে কিংবা বুঝে, না বুঝে ভুল করেই চলছি। উপরন্তু, আমরা জানিও না কখন আমদের ক্ষমা প্রার্থনা কবুল হবে, কাজেই যেখানে যে অবস্থাতেই থাকি না কেন সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকা উচিত।
ক্ষমা প্রার্থনা না করা:
আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, আমরা যেন কখনো শয়তানের ধোঁকায় পরে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে না যাই এবং আমরা যেন ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা ভুলে না যাই। আলি ইবন আবি তালিব(রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “আল্লাহ যাকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করেন তার মনে ক্ষমা প্রার্থনার কথা জাগ্রত হয় না।”
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
আলহামদুল্লিল্লাহ। পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আমি এটা আমার ফেসবুক এ শেয়ার করলাম।