বিনোদন মানুষকে কি ভুলিয়ে রাখে?

19
5268

লিখেছেন: মেরিনার

134

বিনোদন মানুষের জীবনের অমূল্য সময় চুরি করে নিয়ে যায় মানুষের অজান্তেই। মানুষ যেন স্বেচ্ছায় নিজেকে ক্ষয় করার বা নিঃশেষ করার ব্রত নিয়ে বিনোদনের জালে ধরা দেয়। আসুন আমরা ভেবে দেখি বিনোদন আমাদের কি কি ভুলিয়ে রাখে:

১) মানুষের ক্ষুদ্রতা ও অসহায়ত্ব: বিনোদনের মাধ্যমে মানুষকে তার ক্ষুদ্রতা ও অসহায়ত্ব ভুলিয়ে রাখা হয়।

বিনোদনে ডুবে থাকলে মানুষ নিজেকে নিয়ে এবং মহাবিশ্বের সাথে নিজের সম্বন্ধ ও সমন্বয় নিয়ে ভাববার মত কোন অবসর পায় না (মাননীয় পাঠক! আপনি যদি ঢাকা শহরের বাসিন্দা হয়ে থাকেন, তাহলে একবার ভেবে দেখুন তো শেষ কবে আপনি রাতের তারাভরা আকাশের দিকে ২ মিনিট চেয়েছিলেন? আরেকটু মনে করে দেখতে চেষ্টা করুন – খুব সম্ভবত রাতের তারাভরা আকাশের দৃশ্যটা আপনি শেষ টেলিভিশনের পর্দায় ’মিথ্যা মিথ্যা’ দেখেছিলেন, কোন সিনেমার দৃশ্য হিসেবে!)। বরং সে জল্পনা-কল্পনার এক বায়বীয় ও তাত্ত্বিক জগতে বসবাস করে – বাকচাতুর্যের এক ছায়াময় জগতে তার আধিপত্যবলে সে নানা রকম তত্ত্ব উদ্ভাবন করতে শুরু করে।

আজকালকার সাইন্স ফিকশনের যুগে তো কল্পকাহিনী, কল্পনা আর বাস্তবতা সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। আর তাই ’স্ট্রিং থিওরি’ থেকে ’ওমেগা পয়েন্ট’ এর মত কত বিচিত্র সব ’থিওরির’ উদ্ভব ঘটছে এবং ঘটবে। একজন মুসলিমকে মনে রাখতে হবে যে এসব তত্ত্ব কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য নয় – suggestion বা সুপারিশ মাত্র। তাই ’থিওরি’ আসবে এবং ’থিওরি’ যাবে, এরই মাঝে আমাদের অবিচল ভাবে এই বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে যে, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা কোন থিওরির variable নন বরং এই মহাবিশ্বের সবকিছু তাঁর মুখাপেক্ষী – আর তিনি যে সত্য আপনাকে জানিয়েছেন, তাই একমাত্র অপরিবর্তনীয় ধ্রুব সত্য। Big Bang বা Black Hole নিয়ে চিন্তা করে নিজেকে বিশাল একটা কিছু মনে করা মানুষ, আসলে, কত অসহায় যে নিজের পিঠটাও প্রয়োজনে সে ঠিক মত চুলকাতে পারে না – আর এসব নিয়ে সবচেয়ে বেশী যারা ভেবেছেন তাদের অন্যতম Stephen Hawking-এর কথা ছেড়েই দিলাম, কারণ তিনি তো প্রতিবন্ধী, স্বাভাবিক মানুষও নন, নিজের কথা নিজে বলতেও পারেন না। অথচ, আমাদের দেশের “কার্যত অবিশ্বাসী” আঁতেল মানুষজন থেকে শুরু করে, পৃথিবীর তাবত সন্দেহবাদী মানুষ Stephen Hawking-এর মত ”বিশাল” বিজ্ঞানীদের মুখের দিকে চেয়ে থাকেন আল্লাহ্ সত্যি আছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্য।

২) মানুষের মৃত্যুপথযাত্রা: বিনোদনের মাধ্যমে মানুষকে তার মৃত্যুপথযাত্রা ভুলিয়ে রাখা হয়।

জন্মের পর মুহূর্ত থেকে মানুষ যে মৃত্যুপথযাত্রী সেটা ভুলিয়ে রাখার জন্যই মূলত পৃথিবীর সব বিনোদনের আয়োজন। ধরুন আপনি অনেক আয়োজন করে, বন্ধু-বান্ধব-আত্মীয়-পরিজনকে সাথে নিয়ে ছুটি কাটাবেন বলে একটা গাড়ীতে করে রওয়ানা করেছেন। আপনি কোন একটা হাইওয়েতে গাড়ী ছুটিয়ে চলেছেন – আপনার মন খুব প্রফুল্ল, আপনি ক্যাসেট/সিডি প্লেয়ারে চড়া ভল্যুমে গান শুনছেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন রাস্তাটা শেষ হয়ে গেছে মাত্র কয়েক গজ দূরে গিয়ে – কয়েকশ ফুট নীচে একটা পাহাড়ী নদী বয়ে চলেছে। খুব ভয়ঙ্কর দিবা-স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন তাই না? আপনার কাছে তখন আপনার আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধবের চিন্তা, তাদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করার কল্পনা বা পরিকল্পনা সব একেবারে অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আপনি জানেন উবধঃয Death comes as the end – মরণের যাত্রাটা একমুখী, কেউ কখনো জীবনের ঐ সীমারেখা পার হয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। মাননীয় পাঠক! ব্যাপারটাকে যতই দুঃস্বপ্ন বা দিবাস্বপ্ন মনে হোক না কেন, আমরা, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ, আসলে জীবনের বাহনে এরকম একেক জন যাত্রী, যাদের জীবনে যে কোন মুহূর্তে রাস্তাটা হঠাৎ করে অসীমের মাঝে শেষ হয়ে যাবে।

সেই পথের প্রান্ত কার জন্য কত দূরে তা কেউ জানে না জানলে কি John Denver বা Kennedy Junior কেউ তাদের নিজ নিজ উড়োজাহাজে ঐ নির্দিষ্ট দিনে চড়তেন? চড়তেন না নিশ্চয়ই! সে যাহোক পথ কখন শেষ হয়ে যাবে, তা না হয় না জানতে পারি আমরা; কিন্তু ধরুন একটু আগে আপনাকে যে গাড়ীর চালক হিসেবে নিজেকে কল্পনা করতে বলেছিলাম, সেই গাড়ীতে আপনি যখন যাত্রা শুরু করলেন তখনই যদি জানতেন যে, ঐ যাত্রার স্থায়ীত্ব কতটুকু তা না জানলেও ঐ যাত্রাই আপনার শেষ যাত্রা, তাহলে আপনার কেমন লাগতো? পৃথিবীর কোন প্রলোভন, লোভ বা মোহ কি আপনাকে Seduce করতে পারতো? তেমনি মৃত্যুর অনিবার্যতা কেবল ভাসা ভাসা ভাবে মনে জন্মালেও, সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে, একটা পর্দার সামনে বসে, সময় এবং পয়সা ব্যয় করে Manufactured, devised ও engineered সব “মন-পসন্দ” বা ’মন যারে চায়’ মার্কা TV প্রোগ্রাম দেখে আপনি, আপনার জীবনের reality বা অপ্রতিরোধ্য বাস্তবতা: মৃত্যুকে, ভুলে থাকতেন না।

আপনার অহেতুক ফুর্তি লাগতো না এবং আপনি বুঝতেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রবল গতিতে সাঁই সাঁই করে আপনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচেছ Rudyard Kipling-এর From a Railway Carriage-এর দৃশ্যাবলীর মত। আপনি তখন বুঝতেন, জীবনকে সুসংহত করা দরকার, প্রস্তুত করা দরকার ঐ অনিবার্যতার জন্য। আপনি বুঝতেন জীবনে আসলে ফুর্তির যা আনন্দের বিশেষ কিছু নেই। বরং ভাববার রয়েছে অনেক কিছু – করার রয়েছে অনেক কিছু – অথচ পরীক্ষার হলে ’শ্লথ-হাতের-লেখা-সম্পন্ন’ ছাত্রের মত, আপনার জীবনে সময় অত্যন্ত সীমিত। আপনার মন বিষন্ন হয়ে যেতো – আপনি কেবলই ভাবতেন আপনার পথের প্রান্ত কতদূরে? কখন জানি পরীক্ষার খাতায় লেখা বন্ধ করার ঘন্টাটা বেজে ওঠে? আর তাই আপনাকে ঐ বাস্তবতা ভুলিয়ে রাখতে পৃথিবীতে যত খেলাধূলা, ছায়াছবি, নাটক, টিভি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্যাবারে, স্ট্রিপটিজ ইত্যাদি সব কিছুর আয়োজন।

৩) মানব জনমের সার্থকতা: বিনোদনের মাধ্যমে মানব জনমের পূর্ণতা ও সার্থকতা কিসে তা ভুলিয়ে রাখা হয়।

কতকটা আপনি চান বলেও হয়তোবা, কিন্তু মূলত আপনাকে যেন “cog in a machine” বানানো যায় সেজন্য বিনোদনের প্রয়োজন – আপনাকে একটা ঘোরের ভিতরে নিয়ে যাবার জন্য, যে অবস্থায় sleep walker-দের মত আপনি ঘুমিয়ে থেকেও অনেক কিছু করতে পারবেন, সচেতন না হয়েও। আপনি কোন প্রশ্ন না করে অবিশ্বাসী বস্তুবাদীদের ভোগ সুখের যোগান দিতে কেবল কিছু মাসোহারার বিনিময়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করবেন। পশ্চিমা বিশাল শিল্পনগরীগুলোর কর্মজীবী মানুষদের জীবন কেমন হয়? কাজ, ফিরে এসে বিয়ার নিয়ে টিভির সামনে বসা, খাওয়া, ঘুমানো তারপর আবার কাজ। কোন চিন্তা ভাবনা বা মনে কোন প্রশ্ন জাগার অবকাশ বা সুযোগ নেই। এই অবস্থাকেই রাসেল ‘cog in a machine’ বলেছেন। মেশিনের একটা দাঁত যেমন, নির্দিষ্ট সময় পরে পরে একটা বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে একই স্থান অতিক্রম করে, মানুষও তেমন একটা ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা জীবনযাপন করছে আজকের “উন্নত বিশ্বে”। সুতরাং আপনাকে আপনার মানবিক ও মানবসুলভ অস্তিত্ব ভুলিয়ে রাখার জন্য বিনোদনের প্রয়োজন – যেন আপনার মনে সমাজপতিদের নিয়ে কোন প্রশ্ন না জাগে, systemনিয়ে কোন প্রশ্ন না জাগে, বরং আপনি যেন system-এ গা ভাসিয়ে দিয়ে বিশ্বের মুষ্টিমেয় লোভী রাক্ষসের ’ভোগ-সুখের’ যোগান দিতে পারেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “চিরতন হরতন ইস্কাবনের” অতি সনাতন ছন্দে যেন সব কিছু চলে।

আপনি কি জানেন কোটি কোটি ডলারের মালিক Drug lord বা Drug king-দের ছেলেমেয়েরা ধূমপান পর্যন্ত করে না বরং Harvard Law School বা MIT-তে লেখাপড়া করে – আপনার আমার ছেলেমেয়েরা, আমাদের যন্ত্রসুলভ জীবন ধারার জন্য মাদকাসক্ত হয়ে তাদের লক্ষ-কোটি ডলারের তহবিলের যোগান দিয়ে থাকে। বিনোদনে আপনাকে এমনভাবে ডুবিয়ে রাখা হবে, যাতে আপনার স্বাভাবিক বোধশক্তিই না থাকে – Australia-তে যেমন কিছু অঞ্চলে aborigine-দের যেন অথর্ব করে রাখা যায় সারাজীবন, তারা যেন কখনো মাথা তুলতে না পারে, সে জন্য তাদের বসতিপূর্ণ এলাকায় মদ্যপানকে সহজতর করে দেয়া হয় এবং এটা একটা Official Policy হিসেবে করা হয়। আমি খবরের কাগজে পড়েছি যে, একটা আদিবাসী অঞ্চলে মেয়েরা সংগ্রাম করছিল, যেন তাদের এলাকায় মদের সহজলভ্যতা রোধ করে, তাদের পুরুষদের অথর্ব হওয়া থেকে রক্ষা করা হয়। আমাদের দেশের চা বাগান গুলোর “কুলি”দের অবস্থা অনেকটা এ ধরনের ছিল বা প্রায় ক্ষেত্রে এখনো আছে। একদিকে অত্যন্ত নিম্নমজুরী বেঁধে দিয়ে তাদের জীবনে অভাবকে স্থায়ী আসন দেয়া হয়, আবার একই সময় মদ্যপান ও নাচগানের মাধ্যমে হাল্কা বিনোদনের প্রশ্রয় দেয়া হয়।

তাতে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এরকম যে, অভাবী ও দুঃখী বলে সব ভুলে থাকতে (?) মানুষগুলো মদ্যপান ও ফুর্তি করতে গিয়ে সামান্য রোজগারটুকুও হারায় এবং তাদের দুঃখও কখনো ঘোচে না – দুঃখী বলে তারা মদ্যপান করে, আর মদ্যপানে সব হারিয়ে তারা চিরতরে দুঃখীই থেকে যায়। Exploitation-এর নিমিত্তে সৃষ্ট cause and effect বা কার্যকারণের কি অদ্ভুত এক ’পাপচক্র’ !! এভাবে পৃথিবীর অবিশ্বাসী সমাজপতিরা, যারা আমাদের বর্তমান পৃথিবীর পিরামিড বিন্যাসের চূড়ায় রয়েছে, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে, তাদের “শ্রমিক পিঁপড়া” শ্রেণীর শোষণের রক্ষ্যবস্তুরা যেন চিরজীবন বিনোদনের নেশায় ডুবে থেকে বাস্তবতা ভুলে থাকে – তারা যেন কোন বিপজ্জনক প্রশ্ন না করে – তারা যেন এতটুকু সচেতন কখনোই না হতে পারে, যতটুকু হলে রুখে দাঁড়াতে পারে। এখানে ছোট্ট একটা কথা বলে রাখি – কোন সমাজ বিজ্ঞানী যদি ইসলাম সম্বন্ধে জানতে চেয়ে কোন মুসলিমকে জিজ্ঞেস করেন যে, “মুহম্মদ (সা.)-এঁর মিশনে কি এমন ছিল যে, মক্কার সমাজপতিরা তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করতে চাইলো? অথচ, প্রচলিত ধারণা মতে তো ইসলাম শান্তির ধর্ম!” মাননীয় পাঠক, আপনার কাঙ্খিত ও সঙ্গত জবাব কি হবে? আমার জবাব হবে “মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্বের অবসান বা মানুষের দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া ছিল তার মিশনের প্রধান ও ব্যাপক লক্ষ্য।”

৪) অস্তিত্বের বাস্তবতা: বিনোদন অস্তিত্বের বাস্তবতা ভুলিয়ে রাখে।

মাননীয় পাঠক! আপনি কখনো অন্ধকার রাতের পরিস্কার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? অসংখ্য তারার বিশাল মহাকাশের দিকে তাকিয়ে আপনার কি অনুভূতি হয়? আমার তো মনে হয় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে (পাশে কেউ থাকলেও) বেশীর ভাগ মানুষই একটা নিঃসঙ্গতা বোধ করবে – এই নিঃসঙ্গবোধের মূলে রয়েছে নিজের ক্ষুদ্রতা ও অনুল্লেখযোগ্যতার একটা অনুভূতি। মানুষ পৃথিবীতে একা আসে কিন্তু সেটা সে অতটা মনে রাখে না বা রাখতে পারে না। তবে যেতে হবে একদমই একা, এই বাস্তবতাটা তাকে এক ধরনের নিঃসঙ্গ ও বিষন্ন বোধ করতে বাধ্য করে এবং এটাই স্বাভাবিক। এই নিঃসঙ্গতা থেকে মানুষের মুক্তি লাভের উপায় কি? সাধারণ এই সত্যটা উপলব্ধি করা যে, সে আসলে নিঃসঙ্গ নয়, বরং সে তার সৃষ্টিকর্তার সর্বময় জ্ঞানের আওতায় রয়েছে – রাসূল (সা.) যেমন হিজরতের সময় অন্ধকার গুহায় ভীত হযরত আবুবকর (রা.)-কে বলেছিলেন, “আমরা তো মাত্র দু’জন নই, আল্লাহ্ আমাদের সাথের তৃতীয় জন।”

যারা বিশ্বাসী এবং তাকওয়া সম্পন্ন, তারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একথাটা অনুভব করেন। আর নিঃসঙ্গতা দূর করার যে উপায় আল্লাহ্ দেখিয়ে দিয়েছেন, সেই উপায় অবলম্বন করতঃ নিঃসঙ্গতা দূর করতে হবে। আল্লাহ্ যে সাথীকে ’হালাল’ করেছেন, সেই সাথীকে জীবনে গ্রহণ করে, ’আল্লাহ্-অনুমোদিত’ উপায়ে নিঃসঙ্গতা দূর করতে হবে। এছাড়া ভালো মুসলিম হতে হলে সমাজবদ্ধতা বা জামাতবদ্ধতার যে প্রয়োজন, তাতেও আপনা আপনি নিঃসঙ্গতা দূর হবে। কিন্তু তা না করে ব্যক্তিগত “ফুর্তি” আহরণের পশ্চিমা দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে, কোন সমাজবদ্ধতা তো থাকবেই না বরং একটা দেশ বা জাতি কিছু স্বেচ্ছাচারী ’ব্যক্তির’ সমষ্টিতে রূপান্তরিত হবে – শত কোলাহলের মধ্যেও সত্যিকার অর্থে ঘর সংসারের দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক এই মানুষগুলো যেমন যৌবনে নিঃসঙ্গই থেকে যায়, বার্ধক্যে বিভিন্ন হোমে বা আশ্রমে স্থানান্তরিত হয়ে নিঃসঙ্গই নয় কেবল, বরং তার সাথে প্রত্যাখ্যাত হবার অনুভূতি নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।

৫) আপনার মগজ ধোলাই প্রক্রিয়া: আপনার যে মগজ ধোলাই হচ্ছে, বিনোদন তা ভুলিয়ে রাখে।

বিনোদনের আড়ালে যখন আপনার মগজ ধোলাই করা হয়, তখন আপনি সেটা টেরই পান না – বিনোদন সামগ্রী গিলতে গিয়ে মানুষের চেতনা ও বিচারবুদ্ধি এমনভাবে লোপ পায় যে, বিনোদনের মাধ্যমে তার মস্তিষ্কে যে কোন নির্দিষ্ট ’গভীর মর্মবাণী’ প্রোথিত হয়ে যাচেছ, তা সে টেরই পায় না। একটা উদাহরণ দিই: ছোটরা তো বটেই, “আজে বাজে” জিনিস না দেখে, অনেক অভিভাবকরাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে ‘Tom & Jerry’-র মত ’নিষ্পাপ’ কার্টুন দেখে তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গদান করে কৃতার্থ করে থাকেন। সম্মানিত পাঠক! আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন যে ‘Tom & Jerry’-র অন্তর্নিহিত বক্তব্য কি? Reversal of authority বা denial of authority বা reversal of order নিশ্চয়ই! প্রচলিত যে ব্যবস্থা, বিন্যাস বা বাস্তবতা তা হচেছ বিড়াল বড় বা শক্তিশালী – ইঁদুরের উপর তার কর্তৃত্ব থাকবে এবং ইঁদুর তাকে ভয় পাবে। ঠাট্টার ছলে ব্যাপারটাকে উল্টে দিয়ে আসলে শিশু মস্তিষ্কে বাবার বিরুদ্ধে সন্তানকে অবাধ্য হবার এবং স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে অবাধ্য করে তোলার প্রথম বীজ বপন করা হয়। অর্থাৎ প্রচলিত বা traditional (এবং ইসলামীও বটে) মূল্যবোধের অবসানের প্রয়াস।

৬) জ্ঞানার্জন থেকে বিচ্যুতি: বিনোদনের নামে আপনাকে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের প্রয়াস থেকে ভুলিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা হয়।

আপনার অজান্তেই আপনাকে জ্ঞানার্জন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা বা জ্ঞান বিমুখ করা গেল। গবেষণার ফলাফল বলে যে, যারা সারাক্ষণ TV-র সামনে বসে থাকেন, তারা কোন কিছুতেই মনযোগী হতে পারেন না বিধায় তাদের দিয়ে কোন Serious পড়াশোনা সম্ভব নয়**। বস্তুবাদী অবিশ্বাসী সমাজপতিরা জানে, আপনার জ্ঞানার্জন তাদের জন্য কতটুকু বিপজ্জনক!! তাই, তারা চায় যে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে আপনি তাদের হয়ে কাজ করবেন, কেবল ততটুকু জ্ঞানই যেন আপনার থাকে – উন্নত বিশ্বের সাধারণ মানুষরা একদিকে যেমন অবিশ্বাসী সমাজপতিদের লাভবান করতে Junk Food খেয়ে পেট ভরে, অন্যদিকে তেমনি Junk পত্রিকা পড়ে তাদের চিত্ত-বিনোদন ঘটে।

বৃটেনে যেমন Sun বা Mirror শ্রেণীর পত্রিকা পড়ে তাদের সাধারণ মানুষ, আমেরিকাতে তেমনি People শ্রেণীর সাময়িকী চলে । Economist-এর নাম প্রতি তিনজনে একজন জানলেও (!!) সেটা সৌভাগ্যের ব্যাপার হতো। আপনাকে সত্য থেকে সরিয়ে রাখা বা সত্য অনুসন্ধান থেকে দূরে সরিয়ে রাখা বা ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে, বিনোদনের মিডিয়া টাইকুনদের আরেকটা মহান ব্রত। ’খবর’ নামক পণ্য সব সময়ই engineerd এবং fabricated – এখনকার বিশ্বের প্রধান সংবাদ উপস্থাপনকারী সংস্থাগুলো যেহেতু বস্তুবাদী অবিশ্বাসীদের নিয়ন্ত্রণে (বা আরও সঠিকভাবে বললে ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণে), সেহেতু তারা আপনাকে যা বিশ্বাস করাতে চাইবে, তাই দেখাবে, এবং আপনিও তাই বিশ্বাস করবেন। দুর্ভাগ্যবশত আপনার মনে হবে যে, আপনার সময়, সঙ্গতি, সামর্থ বা সাহস কোনটাই অতটুকু পর্যাপ্ত নয়, যতটুকু হলে আপনি এসবের বাইরে গিয়ে সত্য অনুসন্ধান করতে পারতেন।

**দেখুন: (http://www.sonarbangladesh.com/blog/mariner/)

Strangers in Our Homes: TV and Our Children’s Minds – Susan R. Johnson,M.D. with comments by Hamza Yusuf Hanson.


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

19 COMMENTS

  1. ami akjon shadharo pathok ami bhul kicu bolle doa kore kohoma korben. ami akjon MUSHOLMAN ami mone prane bishash kory ALLAH asen abong tar prerito grpntho AL QURAAN shotto abonhg biggan bhithik. kintu ami akta bepare nishchit hoite chai adou ki binodon chara bacha shombho ( binodon bolte shudhu choby dekha kinba ghurte jawa na aitar akta ongsho khela dhulao amar mone hoi na ISLAM er birodhita kore. ami shothik jani na.ar binodoner uddeshe ghurte jawa ta kharap hole MOHAN ALLAH ai shundor prythybte ato boichitro banaten na . manushkeo tar onushondhany drishty ar shoundorjo chetona dyten na . amra keno bhule jai manush ALLAR y shyshty ar tar jabotyo shob kicui shoyong ALLAH r dan .) plz kono bhul thakle amar id te mail korben ar bhul kicu bolle amak ta tar jonno khoma korben.

  2. Critically kono bisoy k na nile satr impact pore na…..i just love my ALLAH.alpo amoli najater jonno jotessto hobe….apnader ai blog ta ki jamay sibir er naki????ora to sib ksu ultai felai

  3. Bhai Apni bolsen “i just love my ALLAH.alpo amoli najater jonno jotessto hobe” Bhai apnake dekhen shaitaan ki bhabe trap e fele dise. Apni Islam na jenei nijer moner moto kore palon kortesen.

    Bhai amol beshi r kom aeta bepar na. Kin2 apnake najater shothik poth jene den amol korte hobe. without proof apni mone kore nite paren na je ami ae amol korbo r Allah amake najath diye dibe. Kibhabe Najath paben aeta Quran e clearly Allah bole diyechen. Otoeb apnake Quraner meaning porte hobe ebong jante hobe ebong shei motabek kaaj korle inshaAllaah apni najath paben. You can download translation of Quran from here: https://quraneralo.com/translation-of-quran-in-bangla-language/

    Allah bolsen:

    মানুষরা কি (এটা) মনে করে নিয়েছে, তাদের (শুধু) এটুকু বলার কারণেই ছেড়ে দেয়া হবে যে, আমরা ঈমান এনেছি এবং তাদের (কোনো রকম) পরীক্ষা করা হবে না। Surah আল আনকাবুত 29 Verse 2

    Ami arekta Ayat Quote korte chai “তোমরা কি (তাহলে) আল্লাহর কিতাবের একাংশ বিশ্বাস করো এবং আরেক অংশ অবিশ্বাস করো? (সাবধান!) কখনো যদি কোনো (জাতি কিংবা) ব্যক্তি (দ্বীনের অংশবিশেষের ওপর ঈমান আনয়নের) এ আচরণ করে, তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হবে যে, পার্থিব জীবনে তাদের লাঞ্ছনা ভোগ করতে হবে, তাদের পরকালেও কঠিনতম আযাবের দিকে নিপে করা হবে; তোমরা (প্রতিনিয়ত) যা করছো, আল্লাহ তায়ালা সে সব কিছু থেকে মোটেও উদাসীন নন। ” Surah Baqarah 2, Verse 85

    Tahole dekhen apni jodi shudhu mukhe bolen je ami eman ansi, I LOVE ALLAH, but oerokom kaaj na koren tahole Allah kintu apnake dhorbe. Ae kothai uporer ayat e bola hoyeche. Allah bolsen pura Quran er upor Iman anar jonne and shei motabek kaaj korar jonne.

    Apnar comment pore aetai bujha jache je apni born Muslim and Islam niye apnar knowledge onek kom. Ashen bhaiya amra amader knowledge aro increase kori jate amra konta shothik r konta bhul bujte pari. Ebong practicing Muslim howar chesta kori.

    PS: এই ওয়েবসাইটটি বিশেষ গোষ্ঠী, শ্রেণী, রাজনৈতিক দল বা কোন প্র্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নয়। Aeta iloveAllaah.com website er akta Project. ILoveAllaah.com is the Largest Islamic Page on Facebook which has more than 3.9 million fans. It promotes Islamic Da’wah – the proper presentation, understanding and appreciation of Islam, as well as removing misconceptions about Islam – amongst less aware Muslims and non-Muslims.

  4. চমৎকার নাতিদীর্ঘ নিবদ্ধ। চিন্তা উদ্রেককারী লেখা। নেশা নিবারণকারী ঔষধ। নিদ্রা জাগরণী Calling Bell. তারপরও যদি কারও হুশ না-হয়, তার আশা খুব কম।

    THANK YOU BROTHER FOR YOUR NICE AND EXCELLENT WRITE-UP.

    JazakAllah Khaer.

  5. যে প্রবন্ধগুলো পড়ে আমার প্রচণ্ড রকম টনক নড়েছিলো, এটা তন্মধ্যে অন্যতম। জাযাকাল্লাহু খাইর Mariner  

  6. THIS ARTICLE IS A GREAT ONE.THOSE WHO ARE DETACHED FROM THE MEDITATION OF ALLAH,MY EARNEST ERNEST REQUEST TO THEM TO GO THROUGH THIS ARTICLE.LIFE’S GOAL IS NOT ONLY ENTERTAIN.ENTERTAIN MAKES US FORGETFUL TO ALLAH AND MD[SAW] MESSAGES.

    A.S.M. SALAHUDDIN,TEACHER,KHAGRAGAR,RAJBATI,BURDWAN-4,INDIA

  7. This is just a bullshit…….the writer just mentioned the name MIT n Harvard, he doesn’t have a little idea about the lifestyle of MIT…..even what science or entertainment means. But they want to eat the fruit of science. This is an article for their own political purpose. Using religion as a political weapon-the strongest and oldest weapon indeed!!!
    Anyway, no need to waste my time here.

  8. সুবহানাল্লাহ। A very nice piece of writing.
    এই সুন্দর লেখাটি পড়ে অনেক ভাই বোনের চোখ খুলে যাবে, আর কারও কারও (যেমন AI) মন আরও বাঁকা হবে.

  9. The truth is : Graduated from MIT/Harvard, but heart is dead. All these dead-heart wild peoples designed nuclear bombs, looted billions of dollars of pension money from the mass Americans, used weather as weapon(HAARP) to destroy the human civilization. That’s not enough for the MIT/Harvard graduates?

  10. I think human has their right to choose his recreation. But the way present society is taking us we have no option but to move with it. The only way to turn around is to selece the right companions who will help each other in the right time. I am looking for such companions. You can choose the right friend who thinks islam and act muslim…only then we can survive….(Thats why it is called jihad ..striving from the evil)

আপনার মন্তব্য লিখুন