লেখক:মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম
পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০
কৃপণতা
কৃপণতা পরিচিতি: বুখল (بخل) শব্দটি আরবী। আভিধানিক অর্থ কার্পণ্য, কৃপণতা, ব্যায়কুণ্ঠতা। পরিভাষায় বলা যায় যে, শরীয়াতে মাল খরচ করার যে ব্যবস্থা আছে তদনুযায়ী খরচ করতে অন্তরে চায় না এ হালতটির নাম হলো বুখল বা কৃপণতা। [94]
আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও কায়েমের জন্য, অভাবগ্রস্ত লোকদের অভাব দূর করার জন্য, নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ ও ধর্মীয় শিক্ষা ইত্যাদির জন্য এবং মনুষ্যত্ব ও ভদ্রতার খাতিরে যা দান করা উচিত তা দান করতে কুণ্ঠিত হওয়া বা অন্তরের প্রতিবন্ধকতাই হলো বুখল বা কৃপণতা।
কৃপণতার হুকুম: অন্যায়ভাবে কোন বিষয়ে কৃপণতা করা হারাম ও কবীরাহ গুনাহ। অন্তরের মধ্যে যে সমস্ত রোগ আছে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কঠিন রোগ হলো কৃপণতা। এটির কারণে মানুষের ইহকাল ও পরোকাল উভয় অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: “যারা আল্লাহ্ তাআলার প্রদত্ত জিনিস আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান মত খরচ করে না, তারা যেন ধারণা না করে তা তাদের জন্য কল্যাণজনক বরং তা তাদের জন্য ক্ষতিকারক। কিয়ামতের দিনে উক্ত মাল যা আল্লাহর পথে খরচ করা হয়নি তা তাদের জন্য গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে।…” [95]
অন্তরে কৃপণতা সৃষ্টি হওয়ার কারণ: অন্তরে কৃপণতা সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো মুহাব্বতে মাল ও মালের হাকীকত সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকা। মালের হাকীকত হলো আল্লাহ্ তা‘আলা মাল দান করেছেন মানুষের দেহ এবং আত্মার ইহকাল ও পরকালের শান্তির জন্য। খোরাক, পোশাক, ঘরবাড়ী ইত্যাদিতে যা খরচ করা হয় তাতে এ জগতের শান্তি লাভ হয়। আর হজ্জ, যাকাত, কুরবানী এবং ধর্ম বিস্তার ও ধর্ম রক্ষা ইত্যাদির জন্য যা খরচ করা হয়, তাতে পরজগতের শান্তি লাভ হয় কিন্তু মানুষকে মাল জমা করার জন্য পয়দা করা হয়নি। বর্তমান যুগে কতক ধনী শ্রেণীর লোকদের দিকে তাকালে মনে হয় যেন তাদেরকে আল্লাহ্ এ দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন শুধুমাত্র মাল সংগ্রহ করার জন্য। আর যেখানে তাদের লাভ আছে সেখানে তারা খরচ করে আর যেখানে কোন সুবিধা ও লাভ নেই সেখানে খরচ করতে চায় না।
কৃপণতার পরিণতি: কৃপণতার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: “… যারা সোনা-রুপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও যেদিন এই সোনা-রূপা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পিঠে ও পাশে সেক দেয়া হবে। আর বলা হবে, এই হলো তোমরা যা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে সেই সম্পদ। অতএব তোমরা তোমাদের সঞ্চিত করা সম্পদের মজা ভোগ কর।” [96]
অন্য এক সূরা মা‘উনে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: “তুমি কি তাকে দেখেছ, যে হিসাব-প্রতিদানকে অস্বীকার করে? সে-ই ইয়াতীমকে কঠোরভাবে তাড়িয়ে দেয়, আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহ দেয় না। অতএব সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে, এবং ছোট-খাট গৃহসামগ্রী দানে নিষেধ করে।” [97]
কৃপণতা মানব চরিত্রের এক দুষ্টু ক্ষত, যা মানুষকে দান-ছাদাক্বা হতে বিরত রাখে। সম্পদ কুক্ষিগত করতে উদ্বুদ্ধ করে। আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন, দুস্থ-অসহায়,মেহমান, প্রতিবেশী প্রভৃতি লোকের হক আদায় ও তাদের প্রতি কর্তব্য পালন করা থেকে বিরত রাখে। পক্ষান্তরে এই দোষ মানুষকে সীমাহীন লোভ-লালসার শিকারে পরিণত করে। যার ফলে সে যে কোন উপায়ে অর্থ উপার্জনে প্রবত্তৃ হয়। আর এর পরিণতি হয় জাহান্নাম। তাই এই দোষ থেকে বেঁচে থাকা মু’মিন মাত্রেরই অবশ্য কর্তব্য। কৃপণতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: “আর যে কার্পণ্য করল ও বেপরওয়া হল এবং সৎকাজকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, অচিরেই আমি তাকে কষ্টে জর্জরিত করব। তার সম্পদ তার কোন কাজে আসবে না।“ [98]
অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন: “যাদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করা হয় বস্তুতঃ তারা হল সফলকাম।” [99]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: “যে অর্থ জমা করে এবং গণনা করে, সে মনে করে যে তার অর্থ-সম্পদ চিরদিন তার সাথে থাকবে। কখনো নয়, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে চূর্ণবিচূর্ণকারী জাহান্নামে।” [100]
উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কৃপণ ব্যক্তি সম্পদ জমা করে রাখে এবং গরীব-দুঃখীদের দান না করে তা গুনে গুনে দেখে। এমনকি পরিবার-পরিজনের জন্যও তারা প্রয়োজনীয় ব্যয় করে না। আল্লাহর রাস্তায় অর্থ খরচ করাকে তারা সম্পদের হ্রাস মনে করে। ফলে তাদের পরিণতি হয় জাহান্নাম। কারণ কৃপণ ব্যক্তি সম্পদের প্রতি অত্যধিক ভালবাসার কারণে ইয়াতীম-মিসকীন ও দরিদ্রদের খাদ্য দান করে না। [101]
এমনকি অন্যের মাল জোর পূর্বক দখল করার চেষ্টা করে। যার ফলে সমাজে অশান্তি ও কলহ-বিবাদ সৃষ্টি হয়। যা এক পর্যায়ে খুনখারাবীতে রূপ নেয়। এজন্যই বলা হয়, অর্থই অনর্থের মূল। অর্থের কারণেই আপনজনের সাথে বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি হয়,সম্পর্ক নষ্ট হয়। পিতা-পুত্রে, ভাইয়ে ভাইয়ে, স্বামী-স্ত্রীতে, ভাই-বোনে, বন্ধু-বন্ধুতে মারামারি, হানাহানি, খুনাখুনি, রক্তপাত পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলে মানুষ জান্নাত থেকে মাহরূম হয়, জাহান্নামের কীটে পরিণত হয়।
কৃপণতা বাঁচার উপায়: বুখল তথা কৃপণতার রিপু অন্তর থেকে দূর করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের উপর আমল করতে হবে। তাহলে কৃপণতার রিপু দমন হবে। বিষযগুলো হলো:
- দেশের সুনাম অর্জন বা দুর্নামের ভয় অন্তর হতে দূরীভূত করতে হবে।
- জীবনের অর্জিত ধনরাশি একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য খরচ করতে হবে।
- শরী‘য়াতের বিধানানুযায়ী হজ্জ, যাকাত ও কুরবানীতে খরচ করতে হবে।
- ধর্মের উপর আক্রমণ আসলে কোন কৃপণতা ছাড়াই জান ও মালের দ্বারা তা প্রতিরোধ করতে হবে।
- সকলের হক আদায়ে সচেষ্ট ও সচেতন থাকতে হবে
- অভাব মোচনের জন্য অভাবের সময় ক্ষুধার্ত লোকের ক্ষুধা নিবারণের জন্য শক্তি পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে ইত্যাদি।[102]
পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০
[94] আল-বুখালাউ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪২২ হি.), খণ্ড ১, পৃ. ৪২
[95] সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০
[96] সূরা তাওবা, আয়াত-৩৪-৩৫
[97] সূরা আল মা‘উন, আয়াত : ১-৭
[98] লাইল ৮-১১
[99] তাগাবুন ১৬
[100] হুমাযাহ ২-৪
[101] ফজর ১৬, ১৯
[102] আল-বুখালাউ, খণ্ড ১, পৃ. ৫৬
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
আলহামদুলিল্লাহ অনেক উপকৃত হলাম
[…] | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব […]