কুরআনের আলোকে নূহ আলাইহিস সালামের দা‘ওয়াহ কার্যক্রম

1
4748

লেখক: ড. মোঃ আবদুল কাদের  | সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 

নবী-রাসূলগণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানব। মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে অগণিত নবী-রাসূল এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীতে এমন কোন জনপদ ও জনগোষ্ঠী নেই যাদের কাছে আল্লাহ তা‘আলা কোন না কোন নবী-রাসূল পাঠাননি। এ প্রসংগে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে,তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাক।’’ [সুরা আন-নাহলঃ ৩৬]

মানুষ সীমাবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী। এ জ্ঞান দ্বারা সমুদয় বস্তুর প্রকৃত ও সম্যক জ্ঞান লাভ অসম্ভব। আর আল্লাহ তা‘আলাও মানুষকে স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী করেছেন। স্বল্প জ্ঞানের মানুষ জানে না যে কিসের উপর তাদের মঙ্গল-অমঙ্গল নির্ভর করে। সৃষ্টি জীবের কোনটি মানুষের উপকারী ও কোনটি অপকারী। ফলে এ সকল জটিল সমস্যা হতে মানুষকে মুক্তি দানের জন্য আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় অসীম কৃপায় নবী-রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে মানুষকে তা বলে দিয়েছেন। আর নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি সবচেয়ে বড় ও কার্যকর রহমতের যে বারিধারা বর্ষণ করেন তা হল, স্বীয় সত্ত্বার প্রতি ঈমান আনয়ন ও তাঁর প্রতি ঐকান্তিক দাসত্বের স্বীকৃতি গ্রহণ। এ কারণেই সকল নবী-রাসূলকে তিনি এ দুটি বিষয় সম্পাদনের জোরালো নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং উম্মতগণকে এ দু’টি বিষয়ের প্রতি দা‘ওয়াত দেয়ার জোর তাকিদ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁকে এই আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত কর ।’’ [1]

উক্ত আদেশপ্রাপ্ত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল নবী-রাসূলের মধ্যে পাঁচজন রাসূল উল্লেখযোগ্য, যাদেরকে আলকুরআনে  হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে [2]। তাঁরা হলেন:

(১) নূহ আলাইহিস সালাম, (২) ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, (৩) মূসা আলাইহিস সালাম, (৪) ঈসা আলাইহিস সালাম এবং (৫) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

এঁদের মধ্যে নূহ আলাইহিস সালাম প্রথম প্রেরিত রাসূল ও দা‘ঈ। বর্তমান প্রবন্ধে তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, ব্যক্তিত্ব,দা‘ওয়াহ কার্যক্রম ও পদ্ধতিসহ আজকের যুগের দা‘ঈদের জন্য কি কি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে সে সম্পর্কে আলোকপাত করব।

এক: নূহ আলাইহিস সালাম-এর পরিচয়:

নূহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর একজন মহাসম্মানিত, দৃঢ়চিত্ত ও উচ্চ মর্যাদাশীল রাসূল ছিলেন। তাঁর নাম ছিল আবদুশ-শাকুর অথবা আবদুল গাফ্ফার।[3] অত্যধিক রোনাজারী ও ক্রন্দনের ফলে তাঁর উপাধি হয় নূহ।[4] পরবর্তীতে এ উপাধিতেই তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল মানযাল।[5] নূহ আলাইহিস সালাম-এর বংশ তালিকা নিম্নরূপ: নূহ ইবন লামিক ইবন মাতুশালিহ ইবন খানুক (ইদ্রিছ আ.) ইবন ইয়ারুদ ইবন মাহলাঈল ইবন ক্বীনান ইবন আনওয়াশ ইবন শীশ আলাইহিস সালাম ইবন আদম আলাইহিস সালাম।[6] অতএব, নূহ আলাইহিস সালাম আদম আলাইহিস সালাম-এর অষ্টম পুরুষ। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে আদম আলাইহিস সালাম-এর ওফাতের ১২৬ বছর পর তাঁর জন্ম হয়।[7] ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত আছে যে, আদম আলাইহিস সালাম ও নূহ আলাইহিস সালাম-এর মাঝখানে দশ কুরুন [8] অতিক্রান্ত হয়েছে। নূহ আলাইহিস সালাম-এর জন্ম সন খৃ. পূ. ২৮৫০-৩৮০০ এর মধ্যবর্তী বলে অনুমিত হয়।[9] ভুপৃষ্ঠের কোন অঞ্চলে নূহ আলাইহিস সালাম-এর আবির্ভাব হয়েছিল সে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত একটি বর্ণনা দ্বারা কিঞ্চিত সন্ধান পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে যে, নূহের জাহাজ প্লাবণের পর জুদী পর্বতের উপর থেমে ছিল।[10] আর এটি এশিয়ার অন্তর্গত ইরাকস্থ ‘‘মাওসেল’’ এলাকায় অবস্থিত। [11]

দুই: ব্যক্তিত্ব :

নূহ আলাইহিস সালাম ছিলেন নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অসংখ্য গুণে গুণান্বিত আল্লাহ তা‘আলার একজন বিশিষ্ট নবী ও রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদম, নূহ, ইব্রাহিম ও ইমরানের বংশকে দুনিয়ায় মনোনীত করেছেন। তাঁরা পরস্পর একই বংশের।’’ [12]

তিনি একজন উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাসূল তথা এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন,যাদের নিকট হতে আল্লাহ বিশেষ প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছেন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘স্মরণ কর সে সময়ের কথা! যখন, আমি নবীগণের মধ্য হতে আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও মরিয়ম তনয় ঈসার কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিলাম।’’ [13]

আর এটা ছিল নবুওয়ত ও রেসালাত বিষয়ক দায়িত্বসমূহ পালন এবং পরস্পর সত্যতা প্রকাশ ও সাহায্য সহযোগিতা প্রদান সম্পর্কিত।[14] কুরআনুল কারীমে সম্মান ও মর্যাদা সহকারে তাঁর নাম ২৮ টি সূরার ৪৩ টি আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। [15]

এমনকি,‘‘নূহ’’ নামে একটি সূরাও নাযিল করা হয়েছে। তিনি আলাইহিস সালাম আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রশংসায় আল্লাহ বলেন: ‘‘নিশ্চয় তিনি কৃতজ্ঞ ও অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।’’ [16]

খানা-পিনা, পোষাক-পরিচ্ছেদসহ সার্বিক বিষয়ে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতেন। [17]

আদম আলাইহিস সালাম-এর পরে ইনি প্রথম নবী, যাকে প্রথম রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। সহীহ মুসলিম শরীফের শাফা‘আত অধ্যায়ে একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছে: ‘‘হে নূহ! তোমাকে যমীনের উপর সর্বপ্রথম রাসূলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।’’ [18]

তিনি সর্বপ্রথম যাবতীয় হুকুম আহ্কাম ও বিধি-বিধানের প্রবর্তক ছিলেন। ফলে, পরবর্তীতে যাবতীয় বিধি-বিধান তাঁর পথ ধরেই প্রণীত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:‘তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, আর যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি, আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না।’’ [19]

প্রখ্যাত মুফাসসির ও ঐতিহাসিকগণ তাঁকে দ্বিতীয় আদম বলে অভিহিত করেছেন। কেননা, নূহ আলাইহিস সালাম-এর সময়কার মহাপ্লাবনে সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কেবলমাত্র নূহের কতক সংখ্যক ঈমানদার সঙ্গী বেঁচে ছিল। পরবর্তীতে মানব জাতি তাঁর বংশ পরস্পরায় পরিণত হয়।[20] সে দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘তাঁর (নূহ) বংশধরদেরকেই আমি অবশিষ্ট রেখেছিলাম।’’ [21]

অতএব,আজকের দিনে সকল বনী আদম নূহ আলাইহিস সালাম-এর তিন পুত্র তথা সাম, হাম ও ইয়াফাস-এর দিকেই সম্বন্ধযুক্ত হবে।[22] সুতরাং ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম-সহ পরবর্তী নবী-রাসূলগণ তাঁরই বংশধর। মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘আমি নূহ ও ইবরাহীমকে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের বংশধরের মধ্যে নবুওয়ত ও কিতাব অব্যাহত রেখেছি। অত:পর তাদের কতক সৎপথ প্রাপ্ত হয়েছে এবং অধিকাংশই হয়েছে পাপাচারী।’’  [23]

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, নবুয়তের ধারাটির সূচনা হয়েছিল আদম আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে, আর তা নূহ আলাইহিস সালাম-এর বংশধরদের মধ্যেই পরবর্তীতে সীমাবদ্ধ ছিল।

তাঁর নবুওয়তপ্রাপ্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। ইবন কাছীরের মতে, পঞ্চাশ বছর বয়সে তিনি নবুওয়ত প্রাপ্ত হন। কারো কারো মতে, তিন’শ পঞ্চাশ বছর বয়সে নবুওয়ত পেয়েছিলেন।[24] তবে অধিকাংশ মুফাস্সিরিনের মতে, চল্লিশ বছরে তিনি নবুওয়ত লাভ করেন।[25] বিশুদ্ধ মতে নূহ আলাইহিস সালাম চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়ত প্রাপ্ত হন।[26] তিনি নবীগণের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হায়াত পেয়েছিলেন। কুরআনের বর্ণনানুযায়ী তিনি নয়শত পঞ্চাশ বছর জীবিত ছিলেন। ফলে তাঁকে  شيخ المرسلين ও বলা হয়। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘আমি নূহ আলাইহিস সালাম কে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম একহাজার বছর অবস্থান করেছেন।’’ [27]

তিন: সমকালীন পরিবেশ:

নূহ আলাইহিস সালাম-এর আবির্ভাবের পূর্বে মানুষ আল্লাহর একত্ব ও ইবাদতের সঠিক রূপরেখা সম্পর্কে সম্পুর্ণ অজ্ঞ হয়ে পড়েছিল। তারা প্রকৃত রবের স্থলে স্বহস্তে নির্মিত মূর্তিসমূহের পূজা করত।[28] তারা ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক এবং নাসর নামক পাঁচটি মূর্তির পূজা করত: ঘোরতর কুফর ও শিরকে নিমজ্জিত ছিল। একে অপরকে এই বলে সম্বোধন করত যে, তারা যেন নূহের প্রচারে প্রভাবিত হয়ে প্রতিমা পূজা পরিত্যাগ না করে। পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘তোমরা তোমাদের দেবদেবীকে পরিত্যাগ করোনা এবং ওয়াদ,সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাসরকে পরিত্যাগ করবে না।’’ [29]

ইবন আব্বাস বলেন, ‘ওয়াদ’ ছিল কালব গোত্রের দেবমূর্তি, দাওমাতুল জান্দাল নামক স্থানে এর মন্দির ছিল। ‘সুওয়া’ ছিল মক্কার নিকটবর্তী হুযাইল গোত্রের দেবমূর্তি। ‘ইয়াগুছ’ প্রথমে মুরাদ গোত্রের এবং পরে বনী গাতিফের দেবতা, এর আস্তানা ছিল সাবার নিকটবর্তী ‘‘জাওফ’’ নামক স্থানে। ‘ইয়াউক’ হামদান গোত্রের দেবমূর্তি। আর ‘নাসর’ ছিল ‘যুলকালা’গোত্রের হিম-ইয়ার শাখার দেবমূর্তি। এগুলো নূহের সম্প্রদায়ের কতিপয় সৎলোকের নাম ছিল। এদের মৃত্যুর পর তারা যেখানে বসে মজলিস করত, শয়তান সেখানে কিছু মুর্তি তৈরী করে স্থাপন করতে তাদের কওমের লোকের মনে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। তাই তারা সেখানে কিছু মূর্তি তৈরী করে এবং তাদের নামে নামকরণ করে। কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হত না। পরবর্তীতে তাদের মৃত্যুর পর এবং মূর্তিগুলো সম্পর্কে সত্যিকার জ্ঞান বিলূপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা করতে শুরু করে।[30]

নূহ আলাইহিস সালামের জাতি এসব প্রতিমাকে তাদের ‘ইলাহ’এর নৈকট্য লাভের উপায় হিসেবে পূজা করত।[31] সর্বপ্রথম তারা ‘ওয়াদ’ নামক প্রতিমার পূজা করে, আর এটি ছিল সবচেয়ে বড়।[32] এসব মূর্তি পরবর্তীতে আরবদের মাঝেও প্রচলন হয়। এ ছাড়াও তাদের মাঝে নানা প্রকার পাপাচার সংগঠিত হত এবং ধর্মীয় ও সামাজিক নানা অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। কাওমের মধ্যে শ্রেণী বৈষম্য রোগও বিস্তার লাভ করেছিল।[33] এতদ্ব্যতীত কুরআনুল কারীম তাদেরকে ফাসিক এবং আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশাবলীর প্রতি বিদ্রোহী ও জালিম বলে অভিহিত করেছে। আল্লাহ বলেন: ‘‘এবং নূহের সম্প্রদায়কে (ধ্বংস করা হয়েছে) আদ ও ছামুদ জাতির পূর্বে। আর তারা ছিল অত্যাধিক জালিম ও অবাধ্য।’’ [34]

অত্যাধিক অহংকার প্রদর্শন করত: তাদের মাঝে আল্লাহ ভীতি ছিল না, ফলে তারা আল্লাহর একত্ববাদ,নবুওয়ত-রিসালাতসহ পরকাল দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। পবিত্র কুরআন তাদেরকে  قوم سوء  বা মন্দ সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।[35] অতএব, ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের দিক দিয়ে নূহ আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায় গোমরাহীর চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল।

চার: দাওয়াহ কার্যক্রম:

যখন পৃথিবীতে বিপর্যয় ও বিশৃংখলা দেখা দেয় এবং নানা প্রকার পাপাচারে সমাজ কলুষিত হয়,মানুষ এক আল্লাহর ইবাদত থেকে বিমুখ হয়ে স্বহস্তে নির্মিত মূর্তির ইবাদতে মশগুল হয়ে পড়ে,তখন মহান আল্লাহ নূহ আলাইহিস সালামকে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করলেন। তিনি আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম স্বজাতিকে তাওহীদ তথা একত্ববাদের প্রতি আহবান জানান,যা ঈমানের মূল ভিত্তি এবং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করতে বারণ করেন। [36] এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘নিশ্চয় আমি নূহ আলাইহিস সালামকে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি। অত:পর সে বলল,হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পরকালীন মহা আযাবের ভয় প্রদর্শন করছি।’’ [37]

মূলত: এ উদ্দেশ্যেই মহান আল্লাহ রাসূল প্রেরণ করে থাকেন। এটিই নূহ আলাইহিস সালাম সহ সকল নবী-রাসূলের দা‘ওয়াতের আলোচ্য বিষয়। এ মর্মে এরশাদ হয়েছে: ‘‘নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট রাসূল পাঠিয়েছি যেন তারা আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুত থেকে বিরত থাকে।’’ [38]

উপরোক্ত আয়াতে কারীমা হতে নূহ আলাইহিস সালাম-এর দা‘ওয়াতের দুটি দিক পরিলক্ষিত হয়। একদিকে তিনি কাওমের হিতাকাঙ্ক্ষী ও শুভাকাংঙ্ক্ষীরূপে নিজেকে পেশ করেছেন এবং একত্ববাদের প্রতি তাদেরকে আহবান জানিয়েছেন। অপরদিকে একজন সতর্ককারী হিসেবে পরকালীন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে তাদের সচেতন হওয়ার জন্য ভীতি প্রদর্শন করেন। পবিত্র কুরআন তাঁকে ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে উল্লেখ করেছে। যেমন: সূরা নূহের প্রারম্ভে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘নিশ্চয়ই আমি নূহ আলাইহিস সালাম কে তার জাতির লোকদের নিকট পাঠিয়েছিলাম,যাতে করে এক ভয়ানক উৎপীড়ক আযাব আসার পূর্বেই তুমি তোমার জাতির লোকদের সাবধান করে দাও। তখন নূহ আলাইহিস সালাম বলল,হে আমার জাতির লোকেরা! আমি তোমাদের জন্য একজন সুস্পষ্ট সাবধানকারী। তোমরা সকলে এক আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য প্রদর্শন কর।’’ [39]

উপরোক্ত আয়াতে কারীমাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, নূহ আলাইহিস সালাম তাঁর নবুওয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের প্রাক্কালে স্বজাতির সামনে তিনটি কথার দা‘ওয়াত পেশ করেছেন। প্রথমত: অন্য সবকিছুর বন্দেগী দাসত্ব ও গোলামী সম্পুর্ণ পরিহার করে কেবলমাত্র আল্লাহকেই নিজের একমাত্র মা‘বুদ হিসেবে উপাসনা-আরাধনা করবে এবং একমাত্র তাঁরই দেয়া বিধি নিষেধ মেনে চলবে। দ্বিতীয়ত: তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে অর্থাৎ যেসব কাজে আল্লাহ নারায হন এবং তাঁর ক্রোধের উদ্রেক হয় তা সবই পরিত্যাগ করবে এবং আল্লাহকে ভয় করে চলার নীতিকে নিজেদের জীবনে পুরোপুরি কার্যকর করবে। তৃতীয়ত: আমার আনুগত্য কর, সেসব আদেশ-নিষেধ মেনে চল যা আল্লাহর রাসূল হিসেবে আমি তোমাদের বলছি।

অনুরূপভাবে নূহ আলাইহিস সালাম স্বজাতিকে আল্লাহর দিকে আহবানের ক্ষেত্রে অসংখ্য পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরা যেমন আ‘রাফ, হূদ, ইউনুছ ও নূহ-এ বিস্তারিত বর্ণিত আছে। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলো উল্লেখ করা হল:

(ক) বিনয় ও নম্রভাবে দাওয়াহ উপস্থাপন:

দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে বিনয় ও নম্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। বিনয় দা‘ঈকে মানুষের নিকটতম করে দেয় এবং তার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে। নূহ আলাইহিস সালাম তাঁর সম্প্রদায়কে অত্যন্ত নম্রতার সাথে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিয়েছিলেন, যাতে করে তারা তা গ্রহণ করে। ফলে  তিনি তাদেরকে ( قوم) বা স্বজাতি বলে  সম্বোধন করেছেন। [40] এখানে  قوم  বলে তিনি তাদেরকে বুঝিয়েছেন যে,তিনি তাদের মধ্য হতে একজন। আর সম্প্রদায়ের লোকজন পরস্পর-পরস্পরের কল্যাণকামী হয়ে থাকে। এছাড়াও তিনি তাদের বংশগত ভাই হিসেবে তাদের কাছ থেকে বংশীয় কোমলতা, মায়া-মমতার আকাঙ্ক্ষী ছিলেন, যাতে করে সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁকে তাদের দূরবর্তী ও অমংগলকামী হিসেবে আখ্যায়িত না করে। পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘স্মরণ কর সে সময়ের কথা যখন (নূহের সম্প্রদায়কে) তাদের ভাই নূহ আলাইহিস সালাম বলল, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না?’’ [41]

এখানে  أخ  বলে বংশীয় ভাই বুঝানো হয়েছে এবং এর দ্বারা পরস্পরের মঙ্গল কামনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।[42] সম্প্রদায়ের সর্দার ও মোড়লগণ তাঁর দা‘ওয়াতের জবাবে বলল: আমরা মনে করি যে,আপনি প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে রয়েছেন। [43] এহেন পীড়াদায়ক ও মর্মন্তুদ কথার জবাবে নূহ আলাইহিস সালাম উত্তেজিত ও ক্রোধান্বিত হবার পরিবর্তে সাদাসিধে ভাষায় তাদের সন্দেহ নিরসনে প্রবৃত্ত হলেন এবং নিজের পরিচয় তুলে ধরলেন: ‘‘হে আমার সম্প্রদায় আমার মধ্যে কোন পথভ্রষ্টতা নেই। বরং আমি বিশ্ব পালনকর্তার পক্ষ থেকে পয়গম্বর। আমি যা কিছু বলি পালনকর্তার নির্দেশেই বলি এবং আল্লাহ তা‘আলার পয়গামই তোমাদের কাছে পৌঁছাই।’’ [44]

অনুরূপভাবে তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করলে তিনি বিনীত সূরে বলেন: ‘‘হে আমার কওম! একটু ভেবে দেখ। যদি আমি আমার রবের পক্ষ হতে স্পষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি, আর তিনি যদি তাঁর পক্ষ হতে আমাকে রহমত দান করে থাকেন। তারপরেও যদি তা তোমাদের চোখে না পড়ে তাহলে,আমি কি ইহা তোমাদের উপর তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপিয়ে দিতে পারি?’’ [45]

এমনিভাবে তিনি বিরুদ্ধবাদীদের যাবতীয় সন্দেহের নিরসন করেছেন।

(খ) উৎসাহ উদ্দীপনা ও ভয়ভীতি সঞ্চার:

তিনি স্বজাতিকে দা‘ওয়াত গ্রহণের নিমিত্বে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার কথা উল্লেখের মাধ্যমে উৎসাহ প্রদান করতেন, যেন তাঁর সম্প্রদায় দুনিয়াতে শান্তি ও পরকালে মুক্তি লাভ করে। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘নূহ আলাইহিস সালাম বলল, হে আমার জাতির লোকেরা! আমি তোমাদের জন্য একজন সুস্পষ্ট সাবধানকারী। (আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি যে,)তোমরা সকলে এক আল্লাহর দাসত্ব কর,তাঁকে ভয় কর এবং আমার অনুগত হও। তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ মার্জনা করবেন,তোমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখবেন। সত্য কথা এই যে, আল্লাহর নির্দিষ্ট সময় যখন আসে, তখন তা রোধ করা যায় না। তোমরা যদি জানতে তবে কতই না ভাল হত।’’ [46]

অনুরূপভাবে তিনি তাদের সাথে এ প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হতেন যে,তোমরা যদি এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর,তাহলে তিনি তোমাদের উপর নে‘আমতরাজি বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদের জীবন যাত্রার মানকে সহজ করে দেবেন। ফলে সম্প্রদায়ের লোকরো তাঁর দা‘ওয়াতের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘অর্থাৎ আমি (নূহ) বলেছি! তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা চাও। নি:সন্দেহে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।এরূপ করলে তিনি তোমাদের জন্য আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন,তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি দিয়ে ধন্য করবেন। তোমাদের জন্য বাগবাগিচা সৃষ্টি করবেন ও ঝর্ণা প্রবাহিত করবেন।’’ [47]

অপরদিকে তিনি দা‘ওয়াত গ্রহণ না করার ভয়াবহ পরিণতি ও আখেরাতের কঠিন শাস্তি সম্পর্কেও স্বজাতিকে সতর্ক করে দেন। আল্লাহ বলেন: ‘‘আমি নূহকে তার জাতির লোকদের নিকট এজন্য পাঠিয়েছি যে, এক ভয়ানক আযাব আসার পূর্বেই তুমি তোমার জাতির লোকদের সাবধান কর। [48]

মুকাতিল বলেন: এখানে ভয়ানক আযাব বলতে তুফানের মাধ্যমে তাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে মারাকে বুঝানো হয়েছে। [49] ইবন কাছীরের মতে, পরকালীন কঠিন শাস্তি দ্বারা মুশরিক অবস্থায় দুনিয়া হতে পরপারে পাড়ি জমানোকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। [50] আর এটা তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তির ভীতি প্রদর্শন মাত্র,যাতে তারা আখিরাতের ভীষণ পরিণাম সম্পর্কে অবগত হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত বিধি বিধানের আনুগত্য করে।

(গ) উত্তম নছিহত:

নূহ আলাইহিস সালাম তাঁর সম্প্রদায়কে জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেই ক্ষান্ত হননি,তিনি উত্তম নছিহত বা সদুপদেশের মাধ্যমে স্বজাতিকে মুক্তির দিকে আহবান করেছেন। তাঁর দা‘ওয়াতে স্বজাতির প্রতি মহববত কল্যাণ ও মংগলাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। স্বজাতির একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে উপদেশের ছলে তিনি বলেন: ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করবে না। কিয়ামতের ভয়ানক আযাব সম্পর্কে আমি তোমাদের সাবধান করছি।’’ [51]

তাঁর এ দা‘ওয়াত শুনে জাতির মোড়লরা বলল, নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে দেখছি। এ বক্তব্যের জবাবে নূহ আলাইহিস সালাম বলেন: ‘‘হে আমার সম্প্রদায় আমি কখনো ভ্রান্ত নই;কিন্তু আম বিশ্বপ্রতিপালকের রাসূল। তোমাদের নিকট আমার রবের পয়গাম পৌঁছাই এবং তোমাদেরকে সদুপদেশ দেই। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন সব বিষয় জানি,যেগুলো তোমরা জান না।’’ [52]

এভাবে নূহ আলাইহিস সালাম অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তাঁর জাতির সংশোধন কামনা করেছেন। তিনি স্বজাতিকে একদিকে আল্লাহর যাবতীয় আদেশ ও নিষেধাবলী পালনের জন্য উৎসাহ যুগিয়েছেন অপরদিকে যাবতীয় অপরাধের জন্য ভয় প্রদর্শন করেছেন।[53] মূলত: দ্বীন হচ্ছে একে অপরের কল্যাণ কামনা। হাদীসে এ মর্মে এরশাদ হয়েছে: ‘‘দ্বীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন,এটা কাদের জন্য? তখন রাসূল (স.) বলেন, এটা আল্লাহ, তাঁর রাসূল, মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণ সকলের জন্য।’’ [54]

(ঘ) প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্যে সার্বক্ষণিক দাওয়াত পেশ:

তিনি দিন-রাত সার্বক্ষণিক দা‘ওয়াতের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। সময়ের প্রতিটি ক্ষণকে তিনি গণিমত ভেবে স্বজাতির নিকট প্রকাশ্য,অপ্রকাশ্য বিভিন্নভাবে দা‘ওয়াহ উপস্থাপন করতেন। এক্ষেত্রে তিনি সময়ের দাবী ও চাহিদানুয়ায়ী উপযুক্ত সময় ও পরিবেশকে গুরুত্ব দিতেন। পবিত্র কুরআন তাঁর দা‘ওয়াতের ধারাবাহিকতাকে নিম্নোক্তভাবে তুলে ধরেছে: ‘‘সে নিবেদন করল,হে আমার রব! আমি আমার জাতির লোকদেরকে দিন-রাত দা‘ওয়াত দিয়েছি।’’ [55]

অতঃপর দা‘ওয়াতের পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: ‘‘অত:পর তাদেরকে আমি উচ্চস্বরে ডেকেছি। তারপর আমি প্রকাশ্যভাবেও তাদের নিকট দ্বীনের দা‘ওয়াত পৌঁছেয়েছি, এমনকি গোপনে গোপনেও তাদের বুঝিয়েছি।’’ [56]

(ঙ) ভ্রাতৃত্ববোধ ও সমতার প্রচলন:

মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন নূহ আলাইহিস সালাম। তিনি তাওহীদের ভিত্তিতে ধনী-গরীব ভেদাভেদ ছিন্ন করে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করেন। ফলে সমাজের দূর্বল শ্রেণীর মানুষেরাও তাঁর আহবানে সাড়া দিতে সক্ষম হয়। বিরুদ্ধবাদীগণ কর্তৃক আনীত অভিযোগে দূর্বল ও স্থুলবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিদের তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নে অভিযুক্ত করা হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে,সে সময়ে সমাজে শ্রেণী বৈষম্য ছিল। কিন্তু তাঁর তাওহীদের আহবান সেই শ্রেণী বৈষম্যের মূলে কুঠারাঘাত করে। পবিত্র কুরআন বিষয়টিকে এভাবে উল্লেখ করেছে: ‘‘অত:পর তাঁর কওমের কাফের সর্দাররা বলল: আমরা তো আপনাকে আমাদের মত একজন মানুষ ব্যতীত আর কিছু মনে করিনা। আর আমদের মধ্যে যারা দূর্বল ও স্থুলবুদ্ধি সম্পন্ন তাঁরা ব্যতীত কাউকে তো আপনার আনুগত্য করতে দেখি না এবং আমাদের উপর আপনাদের কোন প্রাধান্য দেখিনা,বরং আপনাদেরকে আমরা মিথ্যাবাদী বলে মনে করি।’’ [57]

তাদের উপরোক্ত উক্তির দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমত: আপনার দাবী যদি সত্য ও সঠিক হতো,তাহলে কাওমের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গই তা সর্বাগ্রে গ্রহণ করত। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করছে। দ্বিতীয়ত: সমাজের নিকৃষ্ট,ইতর ও ছোটলোকগুলি আপনার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে। এক্ষণে আমরাও যদি আপনার আনুগত্য স্বীকার করি,তবে আমরাও মুসলমান ভাই হিসেবে তাদের সমকক্ষরূপে পরিগণিত হব। নামাযের কাতারে ও অন্যান্য মজলিশে তাদের সাথে এক বরাবর উঠাবসা করতে হবে।[58] এ আপত্তিতে তাদের সংকীর্ণতা ও অহংকার প্রদর্শিত হয়েছে। আর যুগে যুগে দরিদ্র-দূর্বলরাই সমসাময়িক নবীগণের উপর সর্ব প্রথম ঈমান এনেছিল।[59] তাই নূহ আলাইহিস সালাম স্বজাতিকে সকল প্রকার বৈষম্য ভুলে গিয়ে এক আল্লাহর বিশ্বাসী হয়ে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হবার আহবান জানান।

(চ) আল্লাহর অনুগ্রহের স্মরণ:

মানুষের প্রতি আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ রয়েছে। এ অনুগ্রহরাজির সংখ্যা হিসাব করে শেষ করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘তোমরা আমার নে‘য়ামতরাজি গুণে শেষ করতে পারবে না। [60]

আল্লাহর অনুগ্রহের স্মরণ ইসলামী দা‘ওয়াহর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নূহ আলাইহিস সালাম স্বজাতিকে আল্লাহর অনুগ্রহের উল্লেখ করত: দ্বীনের আহবান জানিয়েছেন। বিশেষত: মানব সৃষ্টি ও পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করার আহবান জানান। এ মর্মে কুরআনে এসেছে: ‘‘তিনি (আল্লাহ) নানা পর্যায়ে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে,আল্লাহ কিরূপে সাত আসমান স্তরে স্তরে নির্মাণ করেছেন। আর উহাতে চন্দ্রকে আলো ও সূর্যকে প্রদীপ বানিয়েছেন। আর আল্লাহ তোমাদেরকে মাটি হতে বিষ্ময়করভাবে উৎপন্ন করেছেন। অত:পর এ মাটিতেই তোমাদের সমাধি হবে এবং তা হতে আবার পুনরুত্থিত করবেন। বস্ত্তত: আল্লাহ জমিনকে তোমাদের জন্য শয্যার ন্যায় সমতল করে বিছিয়ে দিয়েছেন,যাতে তোমরা উহার উম্মুক্ত পথ-ঘাটে চলাচল করতে পার।’’ [61]

অত্র আয়াতে কারীমাগুলোর মাধ্যমে সৃষ্টি জগতের স্থাপনা ও শৃংখলার প্রতি দৃষ্টি রেখে এক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপনের আহবান জানানো হয়েছে।

(ছ) পারস্পরিক কথোপকথন ও যুক্তিতর্ক খন্ডন:

ইসলামী দা‘ওয়াহকে ফলপ্রসু করার মাধ্যম হিসেবে নূহ আলাইহিস সালাম মাদ‘উদের সাথে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও কথোকপথন ( حوار )-এর পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এ পদ্ধতিতে দা’ঈর সাথে মাদ‘উদের সরাসরি মত বিনিময় ও যুক্তিতর্ক খন্ডন হয়। ফলে শ্রোতামন্ডলী তথা মাদ‘উদের অন্তরে জাগরিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও সন্দেহের অবসান ঘটে। নূহ আলাইহিস সালাম সেজন্য স্বজাতিকে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ছলে একদিকে যেমন পথ প্রদর্শক হিসেবে এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য ও তাকওয়া অবলম্বনের দিকে আহবান করেছেন।[62] অপরদিকে তেমনি উত্তমরূপে তাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়ে যাবতীয় প্রশ্ন ও সন্দেহের মোকাবিলা করেন। পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘তারা বলল, হে নূহ! আমাদের সাথে আপনি তর্ক করেছেন এবং অনেক কলহ করেছেন। অতএব আপনার সে আযাব নিয়ে আসুন, যা সম্পর্কে আপনি আমাদেরকে সতর্ক করেছেন, যদি আপনি স্বীয় বক্তব্যে সত্যবাদী হয়ে থাকেন।’’ [63]

জবাবে নূহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে বলেন: ‘‘আযাব আমার অধিকারে নহে। ইহা একমাত্র আল্লাহর হুকুমে আসবে। তিনি ইচ্ছা করলে সে আযাব অবশ্যই আসবে এবং তোমরা তাঁহাকে অক্ষম করতে পারবে না।’’ [64]

কিন্তু তাঁর এ যুক্তি-তর্ক বেহুদা ও বিফলে গিয়েছিল এবং সম্প্রদায়ের বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন বৃদ্ধি পেয়েছিল।[65]

(জ) মাদউদের সাথে চ্যালেঞ্জ অবলম্বন:

তিনি আলাইহিস সালাম বিনয় নম্রতা ও উত্তমভাবে স্বজাতির কাছে দা‘ওয়াহ উপস্থাপনের পাশাপাশি কখনো কখনো কঠোরতাও অবলম্বন করেছেন। যাতে করে সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁর দা‘ওয়াহকে একটা চ্যালেঞ্জিং শক্তি হিসেবে মনে করে এবং দা‘ওয়াত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হন। আর এ পদ্ধতিটি সূদীর্ঘ সময় একাধারে তাদের মিথ্যা ও শির্কের পরিণতি সম্পর্কে ভয় প্রদর্শনের পরেই গ্রহণ করেছেন। ফলে পরবর্তী যুগে মূসা আলাইহিস সালাম-সহ সকল নবী-রাসূল তাঁর এ পদ্ধতিটি দা‘ওয়াহর ক্ষেত্রে অবলম্বন করেন। পবিত্র কুরআনে এ মর্মে এরশাদ হয়েছে: ‘‘আর তাদেরকে নূহের অবস্থা জানিয়ে দাও,যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমাদের মাঝে আমার অবস্থিতি এবং আল্লাহর আয়াত সমূহের মাধ্যমে নসীহত করা ভারী বলে মনে হয়ে থাকে,তবে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি। তোমরা সবাই মিলে নিজেদের কর্ম সাব্যস্ত কর এবং এতে তোমাদের শরীকদেরকে সমবেত করে নাও,যাতে তোমাদের মাঝে নিজেদের কাজের ব্যাপারে কোন সন্দেহ সংশয় না থাকে। অত:পর আমার সম্পর্কে যা কিছু করার করে ফেল এবং আমাকে অব্যাহতি দিওনা। তারপরও যদি বিমুখতা অবলম্বন কর, তবে আমি তোমাদের কাছে কোন রকম বিনিময় কামনা করি না। আমার বিনিময় হল আল্লাহর কাছে। আর আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যে,আমি যেন মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হই।’’ [66]

নূহ আলাইহিস সালাম স্বজাতিকে লক্ষ্য করে আরও বলেন: যদি তোমাদের কোন কিছু করার ক্ষমতা থাকে তবে বিলম্ব না করে তা করে ফেল। নিশ্চয় আমি তোমাদের পরোয়া করি না এবং ভয়ও করিনা। তোমাদের কাছে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আর আমি এক আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। [67]

সম্প্রদায়ের লোকরো তাঁর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে অক্ষম হল এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। [68]

(ঝ) ধৈর্য ও কষ্ট সহিঞ্চুতা:

দা‘ওয়াতের পথ অত্যন্ত কন্টকাকীর্ণ। এ পথে চলতে গেলে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। সেক্ষেত্রে ধৈর্য ও কষ্ট-সহিঞ্চুতা অবলম্বন করে দা‘ঈগণ তাঁদের মনযিলে মকছুদে পৌঁছেন। নূহ আলাইহিস সালাম  দুনিয়ার প্রথম দা‘ঈ হিসেবে সর্বপ্রথম এ ধরণের বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। পবিত্র কুরআনের বর্ণনানুযায়ী সূদীর্ঘ সাড়ে নয়শত বছর যাবৎ একত্ববাদের দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তেমন কোন সাড়া পাননি। তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য, গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা, অহংকার প্রদর্শন, বিমুখতাসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তারা তাঁকে ঠাট্টা-বিদ্রুপকরত: বিভিন্নভাবে কষ্ট দিত, এমনকি প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যর হুমকি দিত। [69] তথাপিও তিনি এক মুহূর্তের জন্য তাঁর মিশন থেকে বিরত থাকেননি। ইবনে আববাস বলেন: একদিনের ঘটনা, কাফেররা নূহ আলাইহিস সালাম-এর গলায় রশি বেঁধে টানতে থাকে। ফলে তিনি চৈতন্যহীন হয়ে পড়েন। অত:পর যখন তিনি চৈতন্য ফিরে পান তখন আল্লাহর দরবারে এ বলে প্রার্থনা করেন: ‘‘হে আল্লাহ আপনি আমাকে ও আমার কাওমকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই তারা না জেনে এমনটি করেছে।’’ [70]

অনুরূপভাবে তাঁর স্বীয় স্ত্রী দা‘ওয়াতের এ মহান মিশনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাঁর অবাধ্যতাকে পরবর্তী লোকদের জন্য দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ  করেছেন। কুরআনে এসেছে: নূহ আলাইহিস সালাম ও লূত আলাইহিস সালাম-এর স্ত্রীদ্বয় নবীদের সাহচর্য লাভ করেও সৎকর্মশীল বান্দারূপে পরিগণিত হতে পারেননি। [71]

এমনকি, স্বীয় পুত্রের অবাধ্যতা ও কুফরী তাঁকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। চূড়ান্ত ধ্বংসের প্রক্কালে পিতৃসুলভ স্নেহ ও বাৎসল্যতার কারণে তাঁর মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেও তিনি তার মুক্তি নিশ্চিত করতে সক্ষম হননি। কেননা, আল্লাহর দৃষ্টিতে সে তাঁর ঈমানদার আহলের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।[72] এতদসত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে দু:খ-কষ্ট নির্যাতন সহ্য করেও তিনি লোকদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান জানান এবং চরম ধৈয্যের পরিচয় দেন।

কাফির, মুমিন নির্বিশেষে সবার জন্য দোয়া:

নূহ আলাইহিস সালাম যখন কাওমের হেদায়েত প্রাপ্তি হতে সম্পুর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়লেন এবং তাদের অপচেষ্টা ও হঠকারিতা তাঁর নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তাঁর অক্লান্ত ও অবিরাম হেদায়াত ও তাবলিগের প্রতিক্রিয়া তাদের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি,তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সান্তনা প্রদান স্বরূপ বলেন: ‘‘নূহের প্রতি ওহী নাযিল করা হল এ মর্মে যে,তোমার কাওমের মধ্য থেকে যারা ইতিমধ্যে ঈমান এনেছে,তারা ব্যতীত এখন আর কেউ ঈমান আনবে না। অতএব, তাদের কার্যকলাপের জন্য দূঃখ করো না।’’ [73]

ফলে তিনি জানতে পারলেন যে,তাঁর সত্য প্রচারে কোন ত্রুটি হয়নি। স্বয়ং অমান্যকারীদের যোগ্যতার ত্রুটি এবং তাদের নিজেদের অবাধ্যতার ফল। তখন তিনি তাদের কার্যাবলী ও হীন গতিবিধি দ্বারা ব্যথিত হয়ে আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য বদ্-দোয়া করলেন। [74] পবিত্র কুরআনে এসেছে, নূহ আলাইহিস সালাম বলেন: ‘হে আমার রব! ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী এই কাফেরদের মধ্য হতে একজনকেও ছেড়ে দিওনা। আপনি যদি  এদেরকে ছেড়ে দেন,তাহলে এরা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেবে। আর এদের বংশে পাপাচারী ও কট্টর কাফির ব্যতীত কেউ জন্মিবে না।’’ [75]

এ ধরনের বদ্-দোয়া রাসূলদের জন্য চরম ধৈর্য হতে নিরাশ ও হতাশ হবার পরের পদক্ষেপ স্বরূপ প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ হিসেবে পরিগণিত হয়। পরবর্তী নবী-রাসূলদের জীবনীতেও এ পদ্ধতির সমাবেশ ঘটেছিল।[76] অপরদিকে মু’মিনদের ক্ষমা করার জন্য তিনি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন। সূরা নূহের শেষ আয়াতে এ মর্মে এরশাদ হয়েছে: ‘হে আমার রব! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং আমার ঘরে মু’মিনরূপে প্রবিষ্ট হয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে ও সব মু’মিন পুরুষ মু’মিন মহিলাকে ক্ষমা করে দাও। আর জালিমদের ধ্বংসকে বাড়িয়ে দাও।’’ [77]

অতএব বলা যায় যে,পরিশেষে মু’মিন, কাফির সবার জন্য তিনি আলাইহিস সালাম আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন।

দাওয়াতের প্রতিক্রিয়া:

নূহ আলাইহিস সালাম স্বজাতিকে সূদীর্ঘ পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহবান করেছিলেন। কিন্তু এর বিনিময়ে তিনি কাওমের নিকট হতে তেমন কোন সাড়া পাননি। বরং তারা তাঁর বিরুদ্ধে পথভ্রষ্ট, পাগল, জাদুকর, মিথ্যুক, ঝগড়াটে, প্রভৃতি অপবাদ উত্থাপন করে। এমনকি তাঁকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার হুমকি দেয়।[78] এই দীর্ঘ দিনের প্রচার সত্ত্বেও প্রধানত: নিম্ন শ্রেণীর মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক তাঁর দা‘ওয়াত কবুল করে। যাদের সংখ্যা বিভিন্ন বর্ণনায় ছিল দশ,বাহাত্তর অথবা আশি।[79] কুরআনের ভাষায়: ‘তাঁর প্রতি অল্প সংখ্যক লোকই ঈমান এনেছিল’। [80]

নূহ আলাইহিস সালাম-এর দা‘ওয়াতকে তারা মূলত: দু’ভাবে প্রত্যাখ্যান করত। প্রথমত: বাচনিক তথা বিভিন্ন বক্তব্য ও আপত্তি উপস্থাপনের মাধ্যম যথা, পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘তাঁর কওমের কাফের প্রধানরা বলল: আমরা তো আপনাকে আমাদের মত একজন মানুষ ব্যতীত আর কিছু মনে করি না। আর আমাদের মধ্যে যারা দূর্বল ও স্থুল বুদ্ধিসম্পন্ন তারা ব্যতীত কাউকে তো আপনার আনুগত্য করতে দেখি না এবং আমাদের উপর আপনাদের কোন প্রাধান্য দেখিনা বরং আপনারা সবাই মিথ্যাবাদী বলে আমরা মনে করি।’’ [81]

আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে বুঝা গেল যে,তাদের ধারণা এমন যে,যিনি রাসূল হবেন তিনি মানুষ ব্যতীত ফেরেশ্‌তা বা অন্য কিছু হবেন এবং সমাজের মোড়লগণ তাঁর সর্বপ্রথম অনুসারী হবে। দ্বিতীয়ত: কার্যগত তথা তাদের বাস্তব অবস্থা পেশ। যেমন নূহ আলাইহিস সালাম-এর দা‘ওয়াত পেয়ে তারা পলায়ন করত, কানে আঙ্গুল প্রবেশ করে তা শুনা থেকে বিরত থাকত এবং কাপড় দিয়ে নিজেদের মুখ ঢেকে রেখে দা‘ওয়াতের প্রতি অবজ্ঞা ও অহংকার প্রদর্শন করত। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে:‘‘আমার আহবান তাদেরকে দূরে সরিয়ে দেয়াকে বৃদ্ধি করেছে। আর যখন আমি তাদেরকে ক্ষমার আহবান করতাম,তখন তারা কানে আঙুল প্রবেশ করত। নিজেদের কাপড় দ্বারা মুখ ঢেকে রাখত। নিজেদের আচরণে অনমনীয়তা ও অহংকার প্রদর্শন করত।’’ [82]

আমাদের জন্য যা শিক্ষণীয়:

নূহ আলাইহিস সালাম-এর দা‘ওয়াতের কার্যক্রম ও পদ্ধতিতে আজকের যুগের দা‘ঈদের জন্য অসংখ্য উপদেশাবলী ও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে,যা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে ইসলামী দা‘ওয়াহকে ফলপ্রসু করা সম্ভব। যেমন

১. নম্র ও উত্তম ব্যবহার: ইসলামী দা‘ওয়াহর ক্ষেত্রে নম্র ও উত্তম ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। নম্রতা দা’ঈকে মাদ‘উদের নিকটতম করে দেয় এবং তদেরকে দ্বীন গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এ গুণের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয়ের হয়েছেন। যদি আপনি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন,তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত। সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করে দেন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন, পরামর্শ করে কাজ করুন, আর যখন সিদ্বান্ত নিবেন তখন আল্লাহর ভরসা করুন, নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীকে ভালোবাসেন।’’ [83]

2. সুস্পষ্টভাবে দাওয়াত পেশ: দা’ঈকে সুস্পষ্টভাবে দা‘ওয়াত দিতে হবে,কোন অস্পষ্টতার ছাপ থাকবে না। নবী-রাসূলগণ স্বজাতির নিকট এভাবে দা‘ওয়াত দিতেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আমি প্রত্যেক জাতির নিকট তাদের ভাষা সহকারে রাসূল পাঠিয়েছি, যাতে করে তিনি সুস্পষ্টভাবে তাদের মাঝে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।’’ [84]

তাই নূহ আলাইহিস সালাম বলেছিলেন: নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সুস্পষ্ট ভয় প্রদর্শনকারী। [85]

তাছাড়া প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলতেন,যাতে করে মাদ‘উগণ বুঝতে ও অনুধাবন করতে সক্ষম হন। [86]

3. নি:স্বার্থ ও একনিষ্ঠভাবে দা‘ওয়াত দান:  দা‘ঈকে নি:স্বার্থ ও একনিষ্ঠভাবে দা‘ওয়াত পেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন প্রকারের পার্থিব প্রতিদানের আশা করা যাবে না। একমাত্র আল্লাহর প্রতিদানের প্রত্যাশী হয়েই যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ দা‘ওয়াতের মহান কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। এ মর্মে নূহ আলাইহিস সালাম-এর বক্তব্য পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে: ‘‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি দা‘ওয়াহর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন সম্পদের প্রত্যাশী নই। আমি একমাত্র আল্লাহর প্রতিদানের প্রতীক্ষায় আছি।’’ [87]

4. সৎকর্ম মুক্তির একমাত্র উপায়: প্রত্যেককে নিজ নিজ কৃতকর্ম ও কার্যকলাপের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে, এক্ষেত্রে পিতার বুযর্গী ও উচ্চ মর্যাদা দ্বারা পুত্রের প্রতিকার হবে না এবং পুত্রের নেক আমল দ্বারা পিতাও উপকৃত হবে না। এ বিষয়ে নূহ ও ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সুতরাং সৎকর্মই  একমাত্র মুক্তির গ্যারান্টি।

5. মুমিনের সংস্পর্শ লাভ: কোন কাফির যদি মু’মিনের সংস্পর্শে থাকে,তাহলে তাতে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। যতক্ষণ না সে ব্যক্তি নিজে মু’মিন হবে; ফলে নবীর স্ত্রী ও পুত্র হয়েও জাহান্নামের শাস্তির উপযোগী হতে পারে। সৎ সংসর্গ মানুষকে পাপাচার থেকে দূরে রাখে এবং অসৎ সঙ্গ মন্দকাজে নিয়োজিত করে। অতএব, দা’ঈদের উচিত সর্বদা সৎ লোকের সংস্রবে থাকা। হাদীসে এসেছে: ‘‘প্রতিটি লোক তার সাথেই থাকবে, যাকে সে ভালবাসে।’’ [88]

6. আল্লাহর সাহায্যের প্রত্যাশী হওয়া: দা’ঈদেরকে সর্বদা আল্লাহর সাহায্যের প্রত্যাশী হতে হবে। কেননা আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত এ কাজে সফলতা আসা অসম্ভব। ফলে অনুকুল প্রতিকুল সর্বাবস্থায় তাঁর সাহায্য কামনা করবে। নূহ আলাইহিস সালাম সর্বদা আল্লাহর সাহায্যের প্রতিক্ষায় থাকতেন। জাতির লোকদের অবাধ্যতার অবসানে তিনি প্রার্থনার ছলে বলেন: ‘‘হে আমার রব! আমাকে সাহায্য করুন। তারা আমার উপর মিথ্যারোপ করছে।’’ [89]

7. জোর জবরদস্তির আশ্রয় না নেয়া: মাদ‘উদের দ্বীনের পথে জোর জবরদস্তি করে দা‘ওয়াত গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না। কেননা,জোর করে কারো হৃদয়কে বিজয় ও সন্তুষ্ট করা যায় না। অতএব দা‘ওয়াহকে হিকমতপূর্ণ ও সঠিকভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে মাদ‘উদেরকে আকৃষ্ট করবে। এটি নূহ আলাইহিস সালাম-এর দা‘ওয়াহর অন্যতম একটা পদ্ধতি। তাই পবিত্র কুরআনে এসেছে: ‘‘তিনি (নূহ আ.) বললেন, হে আমার কাওম! একটু ভেবে দেখ, যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে একটা স্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তাঁর বিশেষ রহমত প্রাপ্ত হই। অথচ তা তোমাদের নজরে পড়েনি,তাহলে আমি কি জবরদস্তি করে তোমাদের ঘাঁড়ে তা চাপিয়ে দিতে পারি?’’ [90]

তাছাড়া মাহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন :‘‘অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে কোন জবরদস্তি নেই।’’ [91]

8. দা‘ওয়াতের পাশাপাশি সমসাময়িক উপকরণ ব্যবহার: দা‘ঈ আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভর ও ভরসা রেখে সমসাময়িক যুগশ্রেষ্ঠ বাহ্যিক উপকরণাদি ব্যবহার করতে পারবে। এটি তাওয়াক্কুল-এর পরিপন্থী নয়। বরং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের জন্য সঠিক কর্মপন্থা। এজন্যেই নূহ আলাইহিস সালাম প্লাবন হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য নৌকা তৈরীর আদিষ্ট হয়ে তা তৈরী করেন। [92]

9. হিকমত অবলম্বন: হিকমত বা প্রজ্ঞার গুরুত্ব দা‘ওয়াহর ক্ষেত্রে অপরিসীম। দা‘ওয়াতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ,সময়,স্থান কাল, পাত্র ভেদে দিন-রাত সর্বাবস্থায় দা‘ওয়াতের কাজ আনজাম দিবে। পাশাপাশি হিকমতপূর্ণ ও উত্তমভাবে মাদ‘উদের প্রশ্ন ও সন্দেহের অসারতা প্রমাণ করে যুগের শ্রেষ্ঠ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দা‘ওয়াহকে তুলে ধরবে। মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপন পালনকর্তার পথে হিকমত, উত্তম উপদেশ ও পছন্দযুক্ত পন্থায় তর্কের মাধ্যমে আহবান করুন।’’ [93]

10. জুলুমের পরিণাম ধ্বংস: কোন জাতির ধ্বংসের অন্যতম কারণ জুলূম বা অত্যাচার। আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা মস্তবড় জুলূম। যার পরিণতি হল ধ্বংস। মূলত: কুফর ও শির্ক নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে আল্লাহ তা‘আলা নূহের সম্প্রদায়কে মহাপ্লাবনের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘ অত:পর তুফান বা মহাপ্লাবন (আমার আযাব) তাদেরকে পাকড়াও করেছে। আর এমতাবস্থায় যে,তারা ছিল জালেম।’’ [94]

অতএব,দা’ঈদের সর্বপ্রকার জুলুম থেকে বিরত থেকে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েমের মাধ্যমে সুশীল সমাজ গড়তে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, নূহ আলাইহিস সালাম একজন বড় মাপের মুজাহিদ ও দা‘ঈ ছিলেন। একজন দা‘ঈ ইলাল্লাহ হিসেবে অসংখ্য গুণের আঁধার ছিলেন তিনি। তাঁকে শায়খুল আম্বিয়া বলা হয়। তিনিই প্রথম রাসূল যিনি মানুষদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান জানিয়েছেন এবং যাবতীয় শিরক ও মূর্তিপূজা থেকে বিরত থারার জন্য স্বজাতিকে সতর্ক করেছিলেন। ইসলামী দা‘ওয়াহকে মানুষের মাঝে স্পষ্ট ও কাঙ্ক্ষিত উপায়ে তুলে ধরার জন্য তিনি স্থান,কাল,পাত্র ভেদে বিভিন্ন হেকমতপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করেন। এমনকি, দা‘ওয়াহকে ফলপ্রসূ করার নিমিত্তে আল্লাহর সাহায্য ও তাঁর প্রতি পূর্ণ নির্ভর হওয়ার পাশাপাশি সমসাময়িক যুগশ্রেষ্ঠ উপকরণ ব্যবহার করতে দ্বিধা করেননি। তাই বর্তমান যুগে যারা দা’ঈ ইলাল্লাহ হিসেবে কাজ করছেন,তারা যদি দা‘ওয়াহর ক্ষেত্রে নূহ আলাইহিস সালাম-এর আদর্শ ও পন্থা বেছে নেন,তবে দা‘ওয়াহর ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সাধন সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।

 

[1] আল কুরআন, সূরা আল আম্বিয়া: ২৫।

[2] মুহাম্মদ আলী আস্-সাবুনী, সাফওয়াতুত্ তাফাসীর, দারুল কুরআন, বৈরুত ১৪০১ হি. ১৯৮১ খৃ. পৃ.৪৫০।

[3] ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, বায়তুল মোকাররম-১৯৯৩,১৪শ খন্ড,পৃ. ২২৩।

[4] মাহমুদ আলূসী, রুহুল মাআনী, মাকতাবাতে এমদাদীয়া, মুলতান, তা.বি, ৮ম খন্ড, পৃ. ১৪৯।

[5] আল মাওয়ারদী, তাফসীরুল মাওয়ারদী, দারুল কুতুব আল এলমিয়া, বৈরুত, লেবানন, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ১০৬।

[6] ইবন কাছীর,আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দারুদ দিয়ান লিত্ তুরাছ, মিশর, ১৯৮৮খৃ. ১ম খন্ড, পৃ. ৯৩-৯৪।

[7]  ইবন কাছীর, কাছাছুল আম্বিয়া, মাকতাবাত আর-রিসালাহ, আম্মান, তা.বি. পৃ. ৪৯। তবে মতটি খুব বেশি গ্রহণযোগ্য নয়। পরবর্তী টীকা থেকে তা আরও স্পষ্ট হবে। [সম্পাদক]

[8] قرون  এর অর্থ দীর্ঘ সময়, যুগ বা প্রজন্ম (Generation) । শতাব্দী নয়, যা এক শতাব্দীরও বেশী হতে পারে। পবিত্র কুরআনে قرون  দ্বারা যুগের পর যুগকে বুঝানো হয়ে থাকে। এ মর্মে কুরআনে এসেছে,  و كم أهلكنا من القرون من بعد  نوح অর্থাৎ আমি নূহের পর অনেক উম্মতকে ধ্বংস করেছি। এখানে  قرن  অর্থ  جيل  বা প্রজন্ম (Generation)। ফলে আদম ও নূহের মাঝে হাজার হাজার বছরের ব্যবধান রয়েছে। দ্র. ইবন কাছীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, প্রাগুক্ত, ১ম খন্ড, পৃ. ৯৪।

[9]  আবুদল মাজিদ দারয়াবাদী, তাফসীর মাজিদী, লাহোর, তা.বি. পৃ. ৩৩৮।

[10]  আল কুরআন, সূরা হুদ: ৪৪।

[11] মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল আল বুখারী, সহীহ আল বুখারী, অনুবাদ (বাংলা) মাও: আজিজুল হজ, হামিদিয়া লাউব্রেরী, ঢাকা-১৯৮১ইং, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৫১-৫২। ইবন আব্বাস জুদী সম্পর্কে বলেছেন যে, এটি জাযিরার একটি পাহাড়। জাযিরা বলতে প্রাচীন আরবরা ইরাক, মওসুল ও তৎসংলগ্ন এলাকা বুঝাত। তবে আল্লামা আইনী রহ. জুদী পাহাড়কে মওসুলের পূর্ব দিক বলে নির্ধারণ করেছেন। [সম্পাদক]

[12]  আল কুরআন, সূরা আলে ইমরান: ৩৩-৩৪।

[13]  আল কুরআন, সূরা আল আহযাব: ৭।

[14] মুফতী মুহাম্মদ শফী, তাফসীরে মা’আরেফূল কুরআন, অনুবাদ মাও: মহিউদ্দীন খান, খাদেমুল হারামাইন বাদশাহ ফাহাদ, কুরআন মুদ্রণ প্রকল্প, তা.বি. পৃ. ১০৭২।

[15] মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল মু‘জামু আল মুফাহরাস লি আলফায আল কুরআনিল কারীম, দারুল হাদীস, মিশর-১৯৮৭, পৃ. ৭২২-৭২৩।

[16]  আল কুরআন, সূরা আল ইসরা: ৩।

[17] জুমআ’ আলী আল খাওলী, তারিখুদ্ -দা‘ওয়াহ, দারুত্ ত্বাবআ’ আল মুহাম্মদীয়া, আযহার, ১ম সংস্করণ-১৯৮৪, ১ম খন্ড, পৃ. ৮৯।

[18] মুসলিম ইবন্ হাজ্জাজ,সহীহ মুসলিম, শরহে মুসলিম, নববী, আল মাতবা’ আল মিছরীয়াহ, দিল্লী, তা.বি, ১ম সংস্করণ-১৯২৯ খৃ. বাবু শাফায়াত, ৩য় খন্ড, পৃ. ৬৭।

[19] আল কুরআন, সূরা আশ শুরা: ১৩।

[20] জুম‘আ আলী আল খাওলী, তারিখুদ দা‘ওয়াহ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯১-৯২।

[21] আল কুরআন, সূরা আস্ সাফ্‌ফাত: ৭৭।

[22] ইবন কাছীর, তাফসীর আল কুরআন আল আযীম, প্রাগুক্ত, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ২০।

[23] আল কুরআন, সূরা আল হাদীদ: ২৬।

[24] ইবন কাছীর, কাছাছুল আম্বিয়া, মাকতাবাতুর রিসালাহ, আম্মান, তা.বি. পৃ. ৪৯।

[25] আল মাওয়ারদী, তাফসীর আল মাওয়ারদী, দারুল কুতুব আল ইলমিয়াহ, বৈরুত, লেবানন, তা.বি. ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৯৮।

[26]  মুফতী মুহাম্মদ শফী, তাফসীরে মা’আরেফূল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৭২।

[27]  আল কুরআন, সূরা আল আনকাবুত: ১৪।

[28]  হিফজুর রহমান সিওহারবী, কাছাছুল কুরআন, অনুবাদ: মাও: নুরুর রহমান, এমদাদীয়া লাইব্রেরী, ঢাকা, ১ম খন্ড, পৃ. ৫৪।

[29]  আল কুরআন, সূরা নূহ: ২৩।

[30]  মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল আল বুখারী, সহীহ আল বুখারী, মাকতাবা রশীদীয়া, দিল্লী, তা.বি. কিতাবুত্ তাফসীর, ২য় খন্ড, পৃ. ৭৩২।

[31] আফীফ আব্দুল ফাত্তাহ, মা‘আল আম্বিয়া ফিল কুরআন,দারুল ইলম,কায়রো-১৯৮৪, ৩য় সংস্করণ, পৃ. ৬১।

[32]  ইবন কাছীর, কাসাসূল আম্বিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬।

[33]  আল কুরআন, সূরা, হুদ: ২৭।

[34]  আল কুরআন, সূরা আন্ নাজম: ৫২।

[35]  আল কুরআন, সূরা আল আম্বিয়া: ৭৭।

[36] আব্দুল্লাহ আলূরী, তারিখুদ দা‘ওয়াহ ই’লাল্লাহি বায়নাল আমছি ওয়াল ইয়াওম,কায়রো,মাকতাবাতু ওয়াহবাহ, তা.বি. পৃ. ৪৭।

[37]  আল কুরআন, সূরা আল আ‘রাফ: ৫৯।

[38]  আল কুরআন, সূরা আন নাহল: ৩৬।

[39]  আল কুরআন, সূরা নূহ: ১-৩।

[40]  আল কুরআন, সূরা আল  আ’রাফ: ৫৭; নূহ: ২; হুদ: ২৮,৩০।

[41]  আল কুরআন, সূরা আশ্ শুয়ারা: ১০৬।

[42]  আব্দুল করিম যায়দান,আল মুসতাফাদু মিন কাসাসিল কুরআন লিদ্ দা‘ওয়াতি ওয়াদ দু’য়াতি, মুয়স্‌সাতুর রিসালাত, তা.বি, ১ম খন্ড, পৃ. ১৩১।

[43]  আল কুরআন, সূরা আল আ’রাফ: ৬০।

[44]  আল কুরআন, সূরা আল আ’রাফ: ৬১-৬২।

[45]  আল কুরআন, সূরা হুদ: ২৭-২৮।

[46]  আল কুরআন, সূরা নূহ: ২-৪।

[47]  আল কুরআন, সূরা নূহ: ১০-১২।

[48]  আল কুরআন, সূরা নূহ: ১।

[49] আর-রাযী, ফখরুদ্দীন, আত্ তাফসীর আল কাবীর, দারু এহইয়া আত্ তুরাছ আল-আরাবী, ১৯৮৯ খৃ. ১ম সংস্করণ, ৩য় খন্ড, পৃ. ১৩৪।

[50]  ইবন কাছীর, তাফসীর আল কুরআন আল আযীম, প্রাগুক্ত, ২য় খন্ড, পৃ. ২২৩।

[51] আল কুরআন, সূরা আল আ’রাফ: ৫৯।

[52]  আল কুরআন, সূরা আল আ’রাফ: ৬০-৬২।

[53]  মাহমুদ আলূসী, রুহুল মা’য়ানী, প্রাগুক্ত, ৮ম খন্ড, পৃ. ১৫২।

[54]  মুসলিম ইবন হাজ্জাজ, ছহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত, কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং-৮২।

[55]  আল কুরআন, সূরা নূহ : ৫।

[56]  আল কুরআন, সূরা নূহ : ৮-৯।

[57]  আল কুরআন, সূরা হুদ : ২৭।

[58] মুফতী মুহাম্মদ শফী, তাফসীরে মা’আরেফূল কুরআন, অনুবাদ মাও: মহিউদ্দীন খান, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬২৭।

[59] জুম‘আ আলী আল খাওলী, তারিখুদ দা‘ওয়াহ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৮।

[60]  আল কুরআন, সূরা ইব্রাহিম : ৩৪।

[61]  আল কুরআন, সূরা নূহ : ১৪-২০।

[62]  জুমআ’, আলী আল খাওলী, তারিখুদ দা‘ওয়াহ, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০০।

[63]  আল কুরআন, সূরা আল আ’রাফ : ৫৯-৬২; সূরা হুদ : ৩২-৩৪।

[64] আল কুরআন, সূরা হুদ : ৩৩।

[65]  আন্-নাজ্জার মুহাম্মদ তাইয়্যেব, তারিখ আল আম্বিয়া ফি দু’য়িল কুরআন আল কারীম ওয়া আস্ সুন্নাহ আন্ নববীয়া, মাকতাবাতুল মা’আরেফ, রিয়াদ, ২য় সংস্করণ-১৯৮৩ খৃ. পৃ. ৬৬।

[66]  আল কুরআন, সূরা ইউনুছ: ৭১-৭২।

[67]  কুরতুবী, আল জা‘মে লি আহ্কাম আল কুরআন, দারুল কুতুব আল আরব, কায়রো, ১৯৭৮ খৃ. ১১শ খন্ড, পৃ. ৪৫১; ইবন কাছীর, তাফসীর আল কুরআন আল আজিম, প্রাগুক্ত, ২য় খন্ড, পৃ. ৪২৫।

[68]  আল কুরআন, সূরা ইউনুছ: ৭৩।

[69]  আল কুরআন, সূরা হুদ: ৩৮; সূরা আশ শুয়ারা: ১১৬।

[70]  ইবনুল আছীর, আল কামেল ফিত্-তারিখ, দারুল কুতুব আল ইলমিয়া, বৈরুত, প্রথম সংস্করণ-১৯৮৭ খৃ. ১ম খন্ড, পৃ. ৬৮।

[71]  আল কুরআন, সূরা আত্ তাহরীম: ১০।

[72]  আল কুরআন, সূরা হুদ : ৪৫-৪৬।

[73]  আল কুরআন, সূরা হুদ : ৩৬।

[74]  হিফজুর রহমান সিওহারবী, কাসাসূল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬০।

[75]  আল কুরআন, সূরা নূহ: ২৬-২৭।

[76] আদম আব্দুল্লাহ আলূরী, তারিখুদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহি বাইনাল আমসি ওয়াল ইয়াওমে, মাকতাবাতু ওয়াহবাহ, আল-কাহেরা, পৃ. ৫৫.

[77]  আল কুরআন, সূরা নূহ: ২৮।

[78]  আল কুরআন, সূরা আল আ’রাফ: ৬০; সূরা হিজর : ৬; সূরা আল ফোরকান : ৮; সূরা ছোয়াদ: ৪; সূরা হুদ: ৩২; সূরা আশ্ শুয়ারা: ১১৬।

[79]  ইবন কাছীর, কাছাছুল আম্বিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৩।

[80]  আল কুরআন, সূরা হুদ: ৪০।

[81] আল কুরআন, সূরা হুদ: ২৭।

[82] আল কুরআন, সূরা নূহ: ৬-৭।

[83] আল কুরআন, সূরা আলে ইমরান : ১৫৯।

[84] আল কুরআন, সূরা ইব্রাহিম: ৪।

[85] আল কুরআন, সূরা  নূহ: ২।

[86] আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবন ঈসা, সুনানে তিরমিযি, শামায়েলে তিরমিযি, মাকতাবাতে রশীদীয়া, দিল্লী, পৃ. ১৪।

[87] আল কুরআন, সূরা হুদ : ২৯।

[88]  মুসলিম ইবন হাজ্জাজ, সহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত, বাবুল বির, ২য় খন্ড, পৃ. ৩৩১।

[89] আল কুরআন, সূরা আল মু’মিনুন : ২৬।

[90] আল কুরআন, সূরা হুদ: ২৮।

[91] আল কুরআন, সূরা আল বাকারা: ২৫৬।

[92] আল কুরআন, সূরা হুদ : ৩৭।

[93] আল কুরআন, সূরা আন নাহল: ১২৫।

[94] আল কুরআন, সূরা আল ‘আনকাবুত : ১৪; সূরা হুদ: ৪৪।


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

1 COMMENT

  1. আসসালামু আলাইকুম। তাওহীদ সম্পর্কে জানানোর জন্য আল্লাহর নিকট আপনার জন্য দোআ রইলো। আপনি যেন সঠিক ভাবে সাধারন মুসলিমদের ইসলাম সম্পর্কে জানাতে পারেন এই আমার আশা। ফী-আমানিল্লাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুন