আইন রচনা ও হালাল-হারাম নির্ধারণের অধিকার দাবি করা

0
2200

Judge-and-Jury

লেখক: সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান | অনুবাদক: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

বান্দার ইবাদাত, মোয়ামালাত ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে আইন ও বিধান রচনার অধিকার একমাত্র আল্লাহর – যিনি মানুষের প্রভু ও সৃষ্টি জগতের সৃষ্টিকর্তা। এছাড়া বিবাদ-বিসম্বাদ মিমাংসাকারী ও ঝগড়া-ঝাটি নিষ্পত্তিকারী আইন প্রণয়নের অধিকারও একমাত্র তাঁরই। আল্লাহ বলেন: ‘জেনে রাখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা ও আদেশ দান করা। আল্লাহ বরকতময়, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।[১]

কোন আইন বান্দাদের জন্য উপযোগী। তা তিনিই জানেন। অতঃপর সে মোতাবেক আইন তিনি তাদের জন্য প্রণয়ন করেন। যেহেতু তিনি তাদের সকলের রব, তাই তিনি তাদের জন্য আইন ও যাবতীয় বিধান প্রণয়ন করেন। আর যেহেতু তারা সকলেই তাঁর বান্দা, তাই তারা তাঁর প্রণীত বিধান সমূহ মেনে নেয়। আর এ মেনে নেয়ার যাবতীয় কল্যাণ তাদের দিকেই ফিরে আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আর কোন বিষয়ে যদি তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকে। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।[২]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন, উহার মীমাংসা তো আল্লারই নিকট। আর আল্লাহই হচ্ছেন আমার প্রতিপালক[৩]

আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কাউকে ও বিধান দাতা হিসাবে গ্রহণ করার প্রতি তিনি কঠোর অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। তিনি বলেন: ‘এদের কি এমন কতগুলো শরীক আছে, যারা তাদের জন্য ঐ ধর্মের বিধান রয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি[৪]

অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর শরীয়ত ব্যতীত অপর কোন শরীয়ত গ্রহণ করে, সে মূলত: আল্লাহর সাথে শরীক করে থাকে। আর যে সব ইবাদাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক অনুমোদিত নয়, তা বিদাআত। আর প্রত্যেক বেদআতই ভ্রষ্টতা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করে যা তার অন্তর্গত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত [৫]

কোন ব্যক্তি যদি এমন কাজ করে যার উপর আমাদের নির্দেশ ও বিধান নেই, তাহলে সে কাজ প্রত্যাখ্যাত। [৬ ]

রাজনীতি ও মানুষের মধ্যে বিচার-আচারের ক্ষেত্রে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অনুমোদন করেননি, তা মূলত: তাগুত ও জাহেলিয়াতের বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তবে কি তারা জাহেলী যুগের বিধান কামনা করে? আর বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধানদানে আল্লাহ অপো কে শ্রেষ্ঠতর [৭]

অনুরূপভাবে হালাল-হারাম নির্ধারণ আল্লাহ তাআলারই হক। এতে তাঁর সাথে শরীক হওয়া কারো জন্যই বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘যে সব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না। তা ভক্ষণ করা অবশ্যই পাপ। নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে।[৮]

অত্র আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর হারাম করা কোন কিছুকে হালাল করার ক্ষেত্রে শয়তানগণ ও তাদের বন্ধদের আনুগত্য পোষণ করাকে তাঁর সাথে শিরক বলে সাব্যস্ত করেছেন। অনুরূপভাবে আল্লাহর হালাল করা বস্তুকে হারাম করা কিংবা হারাম করা বস্তুকে হালাল করার ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি আলেমগণ ও শাসকবর্গ এ উভয় প্রকার লোকদের অনুসরণ করে থাকে, সে প্রকৃতপে আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকেও রব বানিয়ে নিল। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদেরকে তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে এবং মরিয়ম তনয় মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তারা তাঁর যে শরীক সাব্যস্ত করে, তা থেকে তিনি পবিত্র।[৯]

তিরমিযী শরীফ ও অন্যান্যের বর্ণনায় এসেছে – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতটি আদি বিন হাতেম তাঈ রা. এর সামনে তেলাওয়াত করলে আদী বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো তাদের ইবাদাত করতাম না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তারা যে সব হারাম বস্তুকে হাল প্রতিপন্ন করতো, তোমরাও কি তাকে হালাল মনে করতে না? আর যে সব হালাল বস্তুকে তারা হারাম সাব্যস্ত করতো, তোমরা কি তাকে হারাম ভাবতে না? উত্তরে আদী বললেন: জী, হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: ওটাই তাদের ইবাদাত। [১০]

সুতরাং হালাল-হারাম সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আনুগত্য করাই তাদের ইবাদাত, যা মূলত: আল্লাহর সাথে শিরকেরই নামান্তর। আর এটা হচ্ছে বড় শিরক যা পুরোপুরি তাওহীদের পরিপন্থী। কেননা তাওহীদের অর্থ হল – আল্লাহ ছাড়া হক কোন ইলাহ নেই – এ সাক্ষ্য দেয়া। আর এ সাক্ষ্য দেয়ার অর্থই হল হালাল-হারাম নির্ধারণের অধিকার শুধু আল্লাহ তাআলার এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা। এ অবস্থা যদি সেই লোকদের হয়, যারা আল্লাহর শরীয়তের খেলাপ হালাল- হারাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে উলামা ও আবেদ লোকদের আনুগত্য করে – অথচ এ সকল আলেমগণ অন্যদের চেয়ে দ্বীন ও এলেমের অধিক নিকটবর্তী, পরন্তু তাদের ভুল কখনো ইজতেহাদ ও গবেষণা প্রসূত হতে পারে, যাতে হক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে ও পুণ্যবান বলে গণ্য হবে। তাহলে সে সব লোকদের কি অবস্থা হবে, যারা কাফির ও নাস্তিকদের রচিত আইন-কানুনের অনুসরণ করে, মুসলিম দেশসমূহে তা আমদানী করে এবং তদনুযায়ী মুসলমানদের মধ্যে শাসনকার্য পরিচালনা করে। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। এরা মূলত: আল্লাহর বদলে কাফিদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে, যারা তাদের জন্য আইন ও বিধান রচনা করে এবং তাদের জন্য হারামকে বৈধ করে মানুষের মধ্যে সে অনুযায়ী শাসন কার্য পরিচালনা করে।

সমাপ্ত

[১] সূরা আরাফ,৫৪
[২] সুলা নিসা, ৫৯
[৩] সূরা শুরা, ১০
[৪] সুরা শুরা ২১
[৫] বুখারী, মুসলিম
[৬] মুসলিম
[৭] সূরা মায়েদা, ৫০
[৮] সূরা আনআম, ১২১
[৯] সূরা তাওবা, ৩১
[১০] তিরমিযী, ইবনে মাজা, ও আরো অনেকে হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন।
উৎস : ইসলাম হাউজ


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন