রামাদান উপলক্ষ্যে মুসলিম রমণীদের প্রতি একটি বার্তা

0
645

লেখকঃ ড. আইদ আল কারণী | সম্পাদনা ও সংযোজনঃ আকরাম হোসাইন

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বিনয়ী ও ধৈর্যধারণকারী মুমিন নারীর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন—তারা পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহপ্রদত্ত (অধিকারসমূহ) হিফাযত করে।

অন্যত্র সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন—

সুতরাং, তাদের প্রতিপালক তাদের দুআ কবুল করলেন এবং বললেন, আমি তােমাদের কর্মফল নষ্ট করব না, তাতে সে পুরুষ হােক বা নারী। তােমরা পরস্পরে একই রকম।[1]

তাই হে আল্লাহর বান্দী, আমার মুসলিম বােন, এই বরকতময় মাস উপলক্ষ্যে আমি আপনার জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে এসেছি। আশা করি, আপনি এ হাদিয়া কবুল করবেন। আল্লাহর কাছে কামনা করি, তিনি যেন আমাকে এবং আপনাকে খাঁটি তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আমাদের গুনাহগুলাে মার্জনা করেন।

এখন আমি আপনার সামনে দশটি গুণের কথা তুলে ধরবাে। আশা করি, আপনি তা মনােযােগ দিয়ে শুনবেন এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন।

এক. মুসলিম নারী আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান আনে। আল্লাহকে রব হিসেবে মানে। মুহাম্মাদ -কে নবী হিসেবে মান্য করে। ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসেবে বিশ্বাস করে। ফলে তার কাজে-কর্মে, কথা-বার্তায় এবং আকীদা-বিশ্বাসে ঈমানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কাজ থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর আযাবকে ভয় করে।

দুই. মুসলিম নারী ওযূ করে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত খুশু-খুযুর সাথে আদায় করে। কোনাে ব্যস্ততা তাকে সালাত থেকে বিরত রাখতে পারে না। কোনাে ব্যস্ততা তাকে ইবাদাত থেকে দূরে রাখতে পারে না। যখন সে সালাতে দণ্ডায়মান হয় তখন দুনিয়ার সব কিছু ভুলে যায়। তার সালাত ‘সল্লু কামা রআইতুমুনী’–এর বাস্তব উদাহরণ হয়ে ওঠে। ফলে তার দিন-রাতের চব্বিশ ঘণ্টা সালাতের প্রভাবে প্রভাবিত হতে থাকে। তার সালাত তাকে অশ্লীল ও মন্দ কর্ম থেকে বাধা প্রদান করে। কারণ, সালাত তাে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখার অত্যন্ত কার্যকর একটি মাধ্যম। কুরআনে কারীমে ঘােষিত হয়েছে—

নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।[2]

তিন. মুসলিম নারী পর্দার প্রতি গুরুত্বারােপ করে। পর্দাবৃত হওয়াকে সৌভাগ্যের কারণ মনে করে। সে মনে করে, পর্দার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন। তাকে অভদ্র ও অসভ্য লােকদের লােলুপ দৃষ্টি থেকে হিফাযত করেছেন। তাকে পরিশুদ্ধ থাকার সুযােগ করে দিয়েছেন। তাই সে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করে। সর্বদা পর্দার বিধান রক্ষা করে। পর্দাবৃত হওয়া ছাড়া গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনে যায় না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন—

হে নবী, তুমি তােমার স্ত্রীদের, তােমার কন্যাদের এবং মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের চাদর নিজেদের (মুখের) ওপর নামিয়ে নেয়।[3]

চার. মুসলিম নারী আন্তরিকভাবে স্বামীর আনুগত্য করে। স্বামীকে হৃদয় দিয়ে ভালােবাসে। তার আরামের ব্যবস্থা করে। তাকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করে এবং তার কল্যাণ কামনা করে। তার সাথে নরম ভাষায় কথা বলে। কখনাে উঁচু আওয়াজে বা রূঢ় ভাষায় কথা বলে না। রাসূল (সাঃ) ও বলেছেন—

যদি কোনাে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রামাদানে সিয়াম রাখে এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাহলে তাকে বলা হবে, জান্নাতের যে-দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করতে পারাে।[4]

পাঁচ. মুসলিম নারী তার সন্তানদের আল্লাহর আনুগত্যের ওপর প্রতিপালন করে। তাদের সহীহ আকীদা শিক্ষা দেয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালােবাসার বীজ বপন করে। তাদের গুনাহ থেকে দূরে রাখতে এবং মন্দ আখলাক থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকে। আল্লাহ তাআলা ঘােষণা করেছেন—

হে মুমিনগণ, নিজেদের এবং তােমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা করাে সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। তাতে নিয়ােজিত আছে কঠোর সৃভাব ও কঠিন হৃদয়ের ফেরেশতাগণ, যারা আল্লাহর কোনাে হুকুমে তার অবাধ্যতা | করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদের দেওয়া হয়।[5]

ছয়. মুসলিম নারী কোনাে গায়রে মাহরামের সাথে নির্জনে অবস্থান করে না। কারণ, রাসূল (সাঃ) বলেন—

‘যখন কোনাে নারী কোনাে পুরুষের সাথে নির্জনে অবস্থান করে তখন শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে উপস্থিত হয়।’ 

মুসলিম নারী মাহরাম ছাড়া সফরে বের হয় না। অত্যধিক প্রয়ােজন ছাড়া বাজার কিংবা পাবলিক প্লেসে গমন করে না। যদি কোথাও যেতেই হয় তাহলে পরিপূর্ণ পর্দার সাথে শালীনভাবে গমন করে।

সাত. মুসলিম নারী পুরুষের বিশেষায়িত বেশ-ভূষা গ্রহণ করে না। সহীহ হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন—

আল্লাহ তাআলা নারীর সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীর ওপর লানত বর্ষণ করেন।[6]

মুসলিম নারী অমুসলিম নারীদের বিশেষায়িত বেশ-ভূষা বা সাজ-সজ্জাও গ্রহণ করে । সহীহ হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন—

যে-ব্যক্তি যে-সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।[7]

আট. মুসলিম নারী অন্য নারীদের মাঝে দাওয়াতের কাজ করে। তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলে। সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। খোঁজখবর নেয়। মােবাইল, ইসলামী অডিও লেকচার এবং ছােট ছােট বইয়ের মাধ্যমে তাদের আল্লাহমুখী করার চেষ্টা করে। আবার সে যা বলে তার ওপর নিজেও আমল করে। নিজেকে এবং অন্যান্য নারীকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে ব্যাকুল ও উদগ্রীব থাকে। সহীহ হাদীসে রয়েছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন—

আল্লাহ তাআলা তােমার দ্বারা একজন ব্যক্তিকেও যদি হেদায়াত দান করেন, তবে সেটা তােমার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট উট দান করার চেয়েও উত্তম।[8]

নয়, মুসলিম নারী অন্তরকে কুচিন্তা থেকে পবিত্র রাখে। সন্দেহজনক কাজ-কর্ম থেকে দূরে থাকে। দৃষ্টিকে হারাম জিনিস দেখা থেকে হিফাযত করে। কাননে গান-বাজনা এবং অশ্লীল কথা-বার্তা শােনা থেকে রক্ষা করে। এক কথায়, সমস্ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কাজে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখে। সে জানে, এটাই হলাে তাকওয়ার মূল কথা। রাসূল (সাঃ) বলেন—

তােমরা আল্লাহকে লজ্জা করার মতাে লজ্জা করাে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আলহামদু লিল্লাহ, আমরা তাে লজ্জা করি। তিনি বললেন, এ লজ্জা নয়, আল্লাহকে পরিপূর্ণ লজ্জা করার অর্থ—তুমি তােমার মস্তিষ্ক ও চিন্তা-চেতনার হিফাযত করবে। তুমি উদর ও খাবারের হিফাযত করবে এবং মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী পরিণতিকে বেশি বেশি স্মরণ করবে। যে-ব্যক্তি আখিরাত কামনা করে, সে দুনিয়ার সৌন্দর্য ছেড়ে দেয়। অতএব, যে-ব্যক্তি এ কাজগুলাে মেনে চলে, সে অবশ্যই আল্লাহকে লজ্জা করার মতাে লজ্জা করে।[9]

দশ. সর্বশেষ যে-বিষয়টির কথা আমি আপনাকে বলতে চাই, তা হলাে সময়ের অপচয় করবেন না। কারণ, একজন মুসলিম নারী তার সময়ের হিফাযত করে। তার দিনরাতকে অহেতুক ও অনর্থক কাজে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকে। সে গীবত করে না। চোগলখুরি করে না। অপরকে গালি দেয় না। খেল-তামাশায় সময় নষ্ট করে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন—

যারা নিজেদের দ্বীনকে ক্রীড়া-কৌতুকের বিষয় বানিয়েছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে, তুমি তাদের পরিত্যাগ করাে।[10]

অপর আয়াতে যারা দুনিয়াতে নিজেদের জীবন ধ্বংস করেছে তাদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কিয়ামতের দিন তারা বলবে—

হায় আফসােস! আমরা তাে এ বিষয়ে বড় অবহেলা করেছি।[11]

হে আল্লাহ, আপনি আমার মুসলিম বােনদের হেদায়াত দান করুন। তাদের অন্তর ঈমানের নূরে নূরান্বিত করুন। তাদের আপনার সন্তুষ্টি অনুযায়ী জীবন-যাপন করার তাওফীক দান করুন।

উৎসঃ ভালোবাসার রামাদান, পৃষ্ঠাঃ ১৩৭ – ১৪২


[1] সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫
[2] সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫
[3] সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৯
[4] মুসনাদে আহমাদ :১৬৬৪
[5] সূরা তাহরীম, আয়াত : ০৬
[6] সহীহ বুখারী : ৫৫৪৬; জামি তিরমিযী : ২৭৮৪
[7] মুসনাদে আহমাদ : ৪৯৩৬; সুনানু আবি দাউদ : ৪০৩১
[8] সহীহ বুখারী : ২৮৪৭; সহীহ মুসলিম : ২৪০৬
[9] জামি তিরমিযী : ২৪৫৮
[10] সূরা আনআম, আয়াত :৭০
[11] সূরা আনআম, আয়াত : ৩১


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন